সৎ লোক, দুর্বল ও মিসকীনদের কষ্ট দেওয়া বা তাদের ওপর অত্যাচার করা ইসলামি শরিয়ত এবং মানবিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। এ বিষয়ে কঠোর সতর্কতা ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। নিচে এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
১. সৎ ও আল্লাহওয়ালাদের কষ্ট দেওয়া (আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা):
সৎ ও নেককার বান্দাদের কষ্ট দেওয়াকে স্বয়ং আল্লাহর সাথে যুদ্ধের শামিল বলা হয়েছে।
একটি হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলী বা বন্ধুর (সৎ ও নেককার বান্দা) সাথে শত্রুতা পোষণ করবে (তাদের কষ্ট দেবে), আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম।" (সহিহ বুখারি)
২. দুর্বল ও মিসকীনদের অসিলায় রিযিক প্রাপ্তি:
অনেকে দুর্বলদের বোঝা মনে করে, কিন্তু হাদিসে এসেছে যে তাদের কারণেই সবলরা সাহায্য ও রিযিক পায়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
"তোমরা কেবল তোমাদের দুর্বলদের অসিলায় সাহায্য ও রিযিকপ্রাপ্ত হয়ে থাকো।" (সহিহ বুখারি)
তাই তাদের কষ্ট দেওয়া মানে নিজের রিযিক ও বরকত নষ্ট করা।
৩. মজলুমের বদদোয়া (সবচেয়ে বিপজ্জনক):
দুর্বল বা সৎ ব্যক্তি যখন অত্যাচারিত হন, তখন তারা 'মজলুম' (অত্যাচারিত) হিসেবে গণ্য হন। তাদের কান্না বা বদদোয়া সরাসরি আল্লাহর আরশে পৌঁছায়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন:
"মজলুমের ফরিয়াদ বা বদদোয়াকে ভয় করবে। কেননা, মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা বা আড়াল থাকে না।" (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
৪. এতিম ও মিসকীনদের ধমক দেওয়া:
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা তাদের কঠোর নিন্দা করেছেন যারা এতিম ও মিসকীনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
সুরা মাউনে বলা হয়েছে:
"তুমি কি তাকে দেখেছ, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে? সে তো ওই ব্যক্তি, যে এতিমকে রূঢ়ভাবেড়িয়ে দেয় এবং মিসকীনকে খাবার খাওয়াতে উৎসাহ দেয় না।" (সুরা মাউন: ১-৩)
৫. পরকালে নিঃস্ব বা দেউলিয়া হওয়া:
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবার সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমরা কি জানো গরিব বা নিঃস্ব কে?" সাহাবিরা বললেন, যার টাকা-পয়সা নেই। নবীজি (সাঃ) বললেন:
"আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত গরিব সে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা, যাকাত নিয়ে আসবে, কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে বা কাউকে আঘাত করেছে। ফলে তার নেক আমলগুলো পাওনাদারদের (যাদের কষ্ট দিয়েছে) দিয়ে দেওয়া হবে। নেক আমল শেষ হয়ে গেলে ওই মজলুমদের গুনাহগুলো তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।" (সহিহ মুসলিম)
#রিয়াদুস_সালেহীন ১ম খণ্ড অনুচ্ছেদঃ ৪৮,
উপসংহার:
ক্ষমতা, পদমর্যাদা বা অর্থের জোরে কোনো দুর্বল, সৎ বা মিসকীন মানুষকে কষ্ট দেওয়া নিজের ধ্বংস ডেকে আনার নামান্তর। দুনিয়াতে হয়তো তারা প্রতিবাদ করতে পারে না, কিন্তু তাদের ‘আহ’ বা দীর্ঘশ্বাস আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে দেরি হয় না। তাই কারও অধিকার হরণ বা কষ্ট দিয়ে থাকলে মৃত্যুর আগেই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত।

0 Comments