Ticker

10/recent/ticker-posts/

আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার ফযীলাত এবং কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে তা অবহিত করার গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। নিচে বিস্তারিতভাবে তা তুলে ধরা হলো:

আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার ফযীলাত এবং কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে তা অবহিত করার গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। নিচে বিস্তারিতভাবে তা তুলে ধরা হলো:

❤️ আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার ফযীলাত (গুরুত্ব ও প্রতিদান)একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা ঈমানের একটি অংশ এবং এর জন্য রয়েছে মহৎ প্রতিদান:

১. ঈমানের স্বাদ লাভরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে। 

(১) যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সর্বাধিক প্রিয় হবে। 

(২) অন্য কোনো ব্যক্তিকে সে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে।

(৩) আল্লাহ কুফুরি থেকে রক্ষা করার পর আবার তাতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষেপের মতো অপছন্দনীয় হবে।" (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

২. আল্লাহর ভালোবাসা লাভহাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন: "আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা একে অন্যকে ভালোবাসে, পরস্পর ওঠাবসা ও দেখা-সাক্ষাৎ করে কিংবা একে অন্যের জন্য খরচ করে, তাদের জন্য আমার ভালোবাসা ওয়াজিব হয়ে যায়।" (মুয়াত্তা মালিক)অন্য এক হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি তার ভাইকে দেখতে অন্য গ্রামে গেল। রাস্তায় আল্লাহ একজন ফেরেশতা মোতায়েন করলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন: তার কাছে কি তোমার কোনো অনুগ্রহ আছে যা তুমি বৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল: না! আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালোবাসি। ফেরেশতা বললেন: আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে এই পায়গাম নিয়ে এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তাঁর জন্যই ভালোবেসেছো। (সহীহ মুসলিম)

৩. কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ারাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় আশ্রয় দেব। আজ এমন দিন, আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া নেই।" (সহীহ মুসলিম)কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়া দিবেন, যাদের মধ্যে একটি শ্রেণী হলো: "ঐ দুজন লোক যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই একত্রিত হয় ও আল্লাহর জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়।" (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)৪. নূরের মিম্বররাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা পরস্পরে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য নূরের মিম্বর স্থাপন করা হবে। যা দেখে নবী এবং শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।" (তিরমিযী)

📢 কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে তা অবহিত করা এবং অবহিত করার পন্থাইসলামে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসলে তা তাকে জানিয়ে দেওয়ার বিশেষ নির্দেশ ও ফযীলাত রয়েছে।

১. অবহিত করার নির্দেশ (প্রেরণাদান)রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যখন কোন মানুষ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালোবাসে।" (সুনানে আবু দাউদ, তিরমিযী)

২. উপকারিতাএই অবহিতকরণ পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।এটি আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ক্ষেত্রে আন্তরিকতা ও সততা প্রকাশ করে।এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনে প্রীতি ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্ক মজবুত হয়।

৩. অবহিত করার পন্থাকাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসার কথা জানানোর সুন্নত পদ্ধতিটি খুবই সহজ ও স্পষ্ট:সরাসরি বলা: সরাসরি বাচনভঙ্গিতে তাকে বলা: "আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি" (إِنِّي أُحِبُّكَ فِي اللَّهِ) বা অনুরূপ কোনো শব্দ।জবাবে বলা: যাকে ভালোবাসার কথা জানানো হয়, তার উচিত সুন্দরভাবে উত্তর দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন:যখন কেউ বলে: "আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি," তখন অপর ব্যক্তি বলবে: "যাঁর উদ্দেশ্যে তুমি আমাকে ভালোবেসেছো, তিনি তোমাকে ভালোবাসুন।" (أَحَبَّكَ الَّذِي أَحْبَبْتَنِي لَهُ) (সুনানে আবু দাউদ)

৪. ভালোবাসার অন্যান্য প্রকাশভালোবাসার কথা মুখে বলার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে কিছু কাজের মাধ্যমেও এই ভালোবাসা প্রকাশ করা সুন্নাহ:উপহার বিনিময়: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, তাহলে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।" (সুনান আবু দাউদ)সালামের প্রসার: একে অপরের সাথে দেখা হলে বেশি বেশি সালামের আদান-প্রদান করা।দোয়া করা: ভালোবাসার মানুষের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করা।সহযোগিতা: তার প্রয়োজনে পাশে থাকা ও সাধ্যমতো সহযোগিতা করা।

#রিয়াদুস_সালেহীন ১ম খণ্ড অনুচ্ছেদঃ ৪৬,

এই বিষয়গুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পারস্পরিক ভালোবাসা কেবল একটি নেক আমলই নয়, বরং এটি ঈমানের একটি ভিত্তি এবং এর প্রতিদান খুবই বিশাল।

Post a Comment

0 Comments