Ticker

10/recent/ticker-posts/

বান্দাকে আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসার আলামত এবং সেই আলামত সৃষ্টি করার জন্য উৎসাহ দান ও তা অর্জনের চেষ্টা করা।

বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা একজন মুমিনের জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। যখন মহান আল্লাহ কাউকে ভালোবাসেন, তখন তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই সফল হয়ে যায়। আপনার জিজ্ঞাসার আলোকে নিচে আল্লাহর ভালোবাসার আলামত, এর ফযিলত এবং তা অর্জনের উপায়গুলো আলোচনা করা হলো:


১. বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার আলামত (লক্ষণসমূহ)

কুরআন ও হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তার মধ্যে কিছু বিশেষ লক্ষণ প্রকাশ পায়:

নেক কাজের তাওফিক ও সহজ হওয়া: আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে ভালো কাজ করার সুযোগ বেশি দেন এবং পাপ কাজ থেকে দূরে রাখেন। মৃত্যুর আগে তাকে তাওবা ও নেক আমলের সুযোগ করে দেন। হাদিসে এসেছে, "আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তাকে (নেক কাজে) ব্যবহার করেন।" (তিরমিজি)


মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা: সহিহ বুখারির হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরাঈল (আঃ)-কে ডেকে বলেন, "আমি অমুককে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো।" এরপর জিবরাঈল (আঃ) আকাশবাসীদের (ফেরেশতাদের) মধ্যে ঘোষণা দেন। ফলে আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের অন্তরে ওই ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়।


দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করা: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের (গভীর) জ্ঞান দান করেন।" (বুখারি ও মুসলিম)

পরীক্ষা ও মসিবত: দুনিয়াতে বিপদ-আপদ বা কষ্ট সবসময় শাস্তির লক্ষণ নয়। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ঈমান ও ধৈর্যের পরীক্ষা নেন। হাদিসে আছে, "আল্লাহ কোনো জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন (বিপদ দেন)।" (তিরমিজি)


দুনিয়ার মোহ থেকে রক্ষা: আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও হারামের লোভ থেকে এমনভাবে রক্ষা করেন, যেমন ডাক্তার রোগীকে ক্ষতিকর খাবার থেকে রক্ষা করেন।

ইবাদতে প্রশান্তি: ইবাদত করতে ভালো লাগা, তাহাজ্জুদে ওঠার আগ্রহ থাকা এবং কুরআনের সাথে সম্পর্ক গভীর হওয়া আল্লাহর ভালোবাসার অন্যতম আলামত।


২. আল্লাহর ভালোবাসা লাভের উৎসাহ ও ফযিলত

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করলে বান্দা যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়, তা মানুষকে এই পথে চলতে উৎসাহিত করে:

আল্লাহর জিম্মাদারী: হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, "আমার বান্দা যখন নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করে, তখন আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে..." অর্থাৎ তার প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী হয় এবং আল্লাহ তাকে বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্তি: আল্লাহর অলি বা বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা ইউনুস: ৬২)


জান্নাতের নিশ্চয়তা: আল্লাহর ভালোবাসা মানেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতের সুসংবাদ।

৩. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের উপায় ও চেষ্টা

কীভাবে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যাবে, তা কুরআন ও সুন্নাহতে স্পষ্ট করা হয়েছে:

রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহর অনুসরণ (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ):

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:

"বলুন (হে নবী), যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।" (সূরা আলে-ইমরান: ৩১)


তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহ মেনে চলা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার প্রধান চাবিকাঠি।

ফরজ ইবাদতের পর নফল ইবাদত করা:

ফরজ ইবাদত (যেমন নামাজ, রোজা) আল্লাহর আদেশ। এরপর নফল ইবাদত (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, নফল দান-সদকা) বান্দাকে আল্লাহর খুব কাছে নিয়ে যায়।


আল্লাহর জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত:

যে যাকে ভালোবাসে, সে তার কথা বেশি স্মরণ করে। আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে জিহ্বাকে সর্বদা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত রাখতে হবে এবং বুঝে কুরআন পড়তে হবে।


সৎ গুণাবলী অর্জন করা:

আল্লাহ কুরআনে নির্দিষ্ট কিছু গুণের কথা বলেছেন যা তিনি ভালোবাসেন:

ইহসান (সৎকর্ম): "নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।"

তাওয়াক্কুল (ভরসা): "আল্লাহ তার ওপর ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।"

সবর (ধৈর্য): "আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।"

তওবা ও পবিত্রতা: "নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।"

আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসা ও ঘৃণা:

কাউকে ভালোবাসলে তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসা এবং কাউকে অপছন্দ করলে তা আল্লাহর জন্যই করা। এটি ঈমানের পূর্ণতা এবং আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার মাধ্যম।


দুআ

আল্লাহর ভালোবাসা চাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি সুন্দর দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা বেশি বেশি এই দুআটি পাঠ করতে পারি:

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাকা, ওয়া হুব্বা মান ইউহিব্বুকা, ওয়াল আমালাল লাজি ইউবাল্লিগুনি হুব্বাকা।”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা চাই, এবং যে তোমাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা চাই, আর এমন আমল করার তৌফিক চাই যা আমাকে তোমার ভালোবাসার কাছে পৌঁছে দেবে।” (তিরমিজি)


আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার প্রিয় পাত্র হওয়ার এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Post a Comment

0 Comments