Ticker

10/recent/ticker-posts/

কষ্ট-যাতনার মুখে সহনশীল হওয়া।

#ইসালিম_একাডেমি_এনপি ‘কষ্ট-যাতনার মুখে সহনশীল হওয়া’ বিষয়টি কেবল একটি বাক্য সংকোচন নয়, এটি মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মনস্তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক গুণ। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

#রিয়াদুস_সালেহীন দ্বিতীয় খণ্ড অনুচ্ছেদঃ৭৬

১. ব্যাকরণগত ও শাব্দিক অর্থ

ব্যাকরণে এই ভাবটিকে প্রকাশের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শব্দ রয়েছে:

এককথায় প্রকাশ: তিতিক্ষা (Titiksha)।

যে ব্যক্তি এটি ধারণ করেন: তিতিক্ষু (যিনি ক্ষমা ও সহনশীলতার সাথে কষ্ট সহ্য করেন)।

সমার্থক শব্দ: সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, সবর, স্থিরতা, তিতিক্ষা।


২. মূল ধারণা: তিতিক্ষা কী?

‘তিতিক্ষা’ শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো—শীত-গ্রীষ্ম, সুখ-দুঃখ, মান-অপমান বা শারীরিক ও মানসিক যাতনা উপস্থিত হলে, কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা বা প্রতিশোধের ইচ্ছা না রেখে তা শান্তভাবে সহ্য করা।

সহনশীল হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনি দুর্বল। বরং এর অর্থ হলো, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভেঙে না পড়ে বা হুট করে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মানসিকভাবে স্থির থাকা।


৩. সহনশীলতার প্রকারভেদ

কষ্টের মুখে সহনশীলতা সাধারণত তিনভাবে দেখা যায়:

শারীরিক সহনশীলতা: রোগশোক বা শারীরিক যন্ত্রণায় স্থির থাকা।

মানসিক সহনশীলতা: প্রিয়জন হারানো, ব্যর্থতা বা অপমানে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়া।

সামাজিক সহনশীলতা: অন্যের কটু কথা বা ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা।


৪. জীবনের প্রয়োজনে এর গুরুত্ব

জীবনের প্রতিটি ধাপে কষ্ট বা চ্যালেঞ্জ আসবেই। যিনি এই কষ্টের মুখে সহনশীল হতে পারেন, তার লাভগুলো হলো:

মানসিক প্রশান্তি: তিনি সহজে হতাশ হন না বা রাগের বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেন না।

সাফল্য অর্জন: প্রবাদ আছে, "সবুরে মেওয়া ফলে"। যারা কষ্টের সময় হাল ছেড়ে না দিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন, দিনশেষে বিজয় তাদেরই হয়।

সম্পর্ক রক্ষা: রাগের মাথায় বা কষ্টের মুহূর্তে মানুষ অনেক সময় প্রিয়জনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলে। সহনশীলতা সম্পর্ক ভাঙা থেকে রক্ষা করে।


৫. ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম ধর্মে: একে 'সবর' (Sabr) বলা হয়। পবিত্র কুরআনে ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, "নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।"


হিন্দু ধর্মে: আত্মজ্ঞান লাভের জন্য যে গুণগুলো প্রয়োজন (শম, দম, উপরতি ইত্যাদি), তার মধ্যে তিতিক্ষা অন্যতম। অর্থাৎ, জাগতিক কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব নয়।

পাশ্চাত্য দর্শনে (Stoicism): স্টোয়িক দর্শনে বলা হয়, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই (যেমন—অন্যের আচরণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ), তা নিয়ে বিচলিত না হয়ে শান্ত থাকাই প্রকৃত বীরের লক্ষণ।


ইসলাম ধর্ম কষ্ট-যাতনার ধৈর্য্যে ‘বাসবর’ ধরণ করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। হাদিসে এ বিষয়ে বহু নির্দেশনা ও সুসংবাদ রয়েছে।

কঠিন কষ্ট-যাতনা ও সহনশীলতা বিষয়ক কিছু ঘটনা ও সহীহ হাদিসে রেফারেন্স দেওয়া:


১. কষ্ট বা বিপদ পাপ মোচনের মাধ্যমে

স্থানীয় নেতা (সাঃ) লেখক, একজন মুমিনের ছেলে যে কষ্টই আসুক না কেন, তা তার গুণাহ মাফের কারণ।

হাদিস: "মুসলমানের উপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎ থামা, দুশ্চিন্তা, ও বড়শানি আসে, এমনকি তার পায়ে যে কষ্ট-ক্লেশ, তার ব্যবহারে তার পাপগুলো মোচন দেয়।"

সহীহ বুখারী: ৫৬৪১; সহীহ সম্প্রদায়ঃ ২৫৭৩


২. ধৈর্য কখন?

বিপদ ডেভিডের সাথে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা টাইহাই আস সহনশীলতা।

হাদিস: নবীজী (সাঃ) লেখক, "বিপদের প্রথম ধাক্কায় ধৈর্য ধরণ করাই সমর্থন ধৈর্য।"

সহীহ বুখারী: ১২৮৩; সহীহ কমিউনিটি: ৯২৬


৩. মুমিনের সব অবস্থা কল্যাণকর

সুখ বা দুঃখ—মুমিন বান্দা সব পরিস্থিতিতেই লাভবান হয় যদি সে সঠিক আচরণ করে।

দিস: "মুমিন হাকের বড়ই বড়ই আরাধ্য! তার অনেক কল্যাণ রয়েছে। এটা মুমিন ছাড়া আর সুখের জন্য আসে না। আসে তবে সে ধৈর্যধারণ (সবর) করে, ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। সহীহ কমিউনিটি: ২৯৯৯


৪. আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে পরীক্ষায় বলেন

কষ্ট বা বিপদের আশঙ্কা এটা অনেক সময় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

হাদিস: ছাত্রকল্যাণ নেতা (সাঃ) লেখক, "আল্লাহ যাকে চান (কে ভালোবাসেন), তাকে বিপদ-আপদ বা পরীক্ষায় বলান (যাতে তার গুণাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়)। সহীহ বুখারী: ৫৬৪৫


৫. সবরের প্রতিদান জান্নাত

শারীরিক বা বড়্য বড় কোনো ক্ষতিতে ধৈর্য ধরলে তার প্রতিদান জান্নাত।

হাদিস: আল্লাহ তাআলা (হাদি কুদসিতে) বলেন, "আমি যখন আমার মুমিন বান্দার প্রিয় কে (অর্থাৎ) দুইটি পরীক্ষা নিয়ে (অন্ধকার করি) এবং সেভর্য ধৈর্যধারণ করে, তবে আমি এর সুবিধা জান্নাতে তাকে। দান করি।" সহীহ বুখারী: ৫৬৫৩


৬. মনে কষ্ট পরকালের শান্তির চেয়ে তুচ্ছ

দুনিয়াতে যারা কষ্ট সহ্য করে, পরকালে তাদের মর্যাদাবাদ অন্যরা আফসোস করবে।

হাদিস: "কেমত্য দিন বিপদগ্রস্ত ও রোগাক্রান্তদের (ধৈর্যের ব্যবহারে) যখন সওয়াব দেওয়া হবে, তখন শক্তিশালী ও বিপদমুক্ত হওয়া আসোস করে বলে-হায়! দুনিয়াতে যদি আমাদের ক্ষমতায়ন কাঁচি বন্দোকর টুকরো টুকরো করা হয়। (আর ধৈর্য ধরতাম), তাহলে আজ কতই না ভালো! জামে তিমিজি: ২৪০২


৭. নতুনদের পরীক্ষা ছিল সবচেয়ে কঠিন

হাদিস সা'দ (রাঃ) উপায় কি, "হে উপায়! মানুষের মধ্যে কার পরীক্ষা (কষ্ট) সবচেয়ে কঠিন?" তিনি বললেন, "নবীদের কাছে তারা বলে, তারা তাদের পরের দিকের পথ ধরে তার দ্বীনদারি বা জ্ঞানের পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়।" জামে তিমিজি: ২৩৯৮; ইবনে মাজাহ: ৪০২৩


হাসে আলোকে কষ্ট-যাত নারন সহশীল কেবল চুপ করা নয়; আমি এটি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকতে, যা পাপমুক্ত করে এবং জান্নাতের পথে যেতে পারে।

সারসংক্ষেপ

সহজ কথায়, ‘কষ্ট-যাতনার মুখে সহনশীল হওয়া’ হলো একটি বর্মের মতো। এটি মানুষকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে এবং ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। এই গুণের চর্চা মানুষকে সাধারণ পর্যায় থেকে মহৎ পর্যায়ে উন্নীত করে।

#মুহাম্মদের_বাণী #ইসলামিক_একাডেমি_এনপি #হে_মুমিনগণ! #ইবনে_মাজাহ  #হাদীস_বিশ্ব_নবীর_বাণী  #সুনানে_ইবনে_মাজাহ #রিয়াদুস_সালেহীন

Post a Comment

0 Comments