Ticker

10/recent/ticker-posts/

ক্ষমা প্রার্থনা করার ফযিলত ও তার কতিপয় বাক্য;

ক্ষমা প্রার্থনা করার ফযিলত ও তার কতিপয় বাক্য;
ক্ষমা প্রার্থনা করার ফযিলত ও তার কতিপয় বাক্য;

(ক) ক্ষমা প্রার্থনার ফযীলত:


১। শুনাহ হতে তাওবাকারী গুনাহ মুক্ত ব্যক্তির ন্যায়:

আবু উবায়দা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন: গুনাহ হতে তরবাকারী গুনাহ মুক্ত ।


সুনানে ইবনে মাজাহ, বিলাসিতা ত্যাগ অধ্যায়, তাওবার বর্ণনা, হাদীস ও ৪৩০৪, ২/৪৩৮, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: সুনানে ইবনে মাজাহ ২/৪১৮।)


২। বান্দার তাওবায় আল্লাহর মহা আনন্দ:

ইবনে মাসউদ এ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: কোন ব্যক্তি নির্ম জীবন বিধ্বংসী বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে খাদ্য-পানীয় ও অন্যান প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ সওয়ারী নিয়ে বের হয় এবং মধ্য মরুভূমি আহার্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখে তার নিকট থেকে সওয়ারী চলে গেছে। 


অতঃপর সেটি তালাশ করবে বের হয় কিন্তু ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় প্রায় মৃত্যুর উপক্রম হয় তুবুও পায় না। তখন সে বলে, আমি যেখানে সওয়ারীটি হারিয়েছি সেখানে গিয়েই মরব। তথায় পৌঁছে মৃত্যু অবধী ঘুমাবো । 

তারপর সে ঘুমিয়ে পড়। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখে তার সওয়ারী তার নিকটেই দাঁড়িয়ে আছে। আর তাতে তার খাদ্য- পানীয় মজুদ রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা তার কোন মুমিন বান্দার তাওবায় সে ব্যক্তির চেয়েও বেশী খুশী হন


বুখারী ও মুসলিম: সহীহ বুখারী, দাওয়াত অধ্যায়, তাওবা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬৩০৮, ১১/১০২, ও সহীহ মুসলিম তাওবা অধ্যায়, তাওবার প্রতি উৎসাহ ও তাতে আনন্দিত হওয়া পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩-(২৭৪৪), ৪/২১০৩ এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার।


৩। তাওবাকারীর প্রতি আল্লাহর বালবাসা

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

( إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ (سورة البقرة : ۲۲۲)


অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীকে ভালবাসেন আরো ভালবাসেন পবিত্রতা অর্জনকারীকে । (সূরা বাকারা: ২২২)


৪। আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীর গুনাহকে সওয়াব দ্বারা পরিবর্তন করে দেন আল্লাহ তায়ালা বলেন:


وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلكَ يَلْقَ أَثَامًا. يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَة وَيَخْلُدْ فيه مُهَانًا. إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأَوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ


অর্থাৎ এবং তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না । আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলি করে, সে শাস্তি ভোগ করবে।

কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।

তারা নয়, যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দিবেন পূণ্যের দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ফুরকান: ৬৮-৭০)


৫। আল্লাহ তায়ালা মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষাণ: 

৬। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে দেনঃ

৭। সন্তানাদি বৃদ্ধি করে দেনঃ

৮। উদ্যানসমূহ প্রদান করেন:

৯। নহরসমূহ প্রদান করেন:


আল্লাহ তায়ালা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন: তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলতেন:


فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا ﴾ (سورة


অর্থাৎ অত:পর আমি বলেছি: তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করাবেন, তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করাবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করাবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করাবেন নদী-নালা। (সূরা নূহ: ১০-১২)


১০৷ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়:

আল্লাহ তায়ালা হুদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন: তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলতেন:

(وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءِ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُحْرِمِينَ) (سورة هود (٥٢)


অর্থাৎ হে আমার প্রম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অত:পর তাঁর দিকেই ফিরে আস । তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করাবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরে নিও না। (সূরা হুদ: ৫২)


১১। রহমত বর্ষণ হয়ঃ

আল্লাহ তায়ালা সালেহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন: তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলতেন:



(قَالَ يَا قَوْمِ لِمَ تَسْتَعْجِلُونَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ لَوْلا تَسْتَغْفِرُونَ اللهَ لَعَلَّكُمْ

অর্থাৎ সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ? কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার? (সূরা নামল: ৪৬)


১২। দুঃখ হতে আনন্দ লাভ:

১৩। সংকীর্ণতা হতে মুক্তি লাভ:


১৪ । এমনভাবে রিযিক আসবে যা সে ধারনাই করতে পারে না: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সকল প্রকার চিন্তা- ভাবনা দূর করে দিবেন, এবং সকল প্রকার সংকীর্ণতা হতে মুক্তি দান করবেন এবং তাকে কোথা হতে রিযিক প্রদান করবেন, তা সে কখনো ধারনাই করেনি ।


মুসনাদ, হাদীস নং ২২৩৪, ৪/৫৫-৫৬; ও সুনানে আবু দাউদ, কিয়ামুল্লায়ল অধ্যায়, বিতর নামাযের বিভিন্ন পরিচ্ছেদ, ক্ষমা প্রার্থনা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১৫১৫, ৪/২৬৭; এবং কিতাব সুনানে কুবরা, কিতাব আমালুল ইয়াম ওয়াল লাইলাহ, হাদীস নং ১০২৯০/২, ৬/১১৮, ও সুনানে ইবনে মাজাহ, আদব অধ্যায়, ক্ষমা প্রার্থনা পরিচ্ছেদ, হাদীস নয় ৩৮৬৪, ২/৩৩৯; কতিপয় মুহাদ্দিস হাদীসটিকে কোন এক বর্ণনাকারীর কারণে দূর্বল বলেছেন।


(দেখুন: আউনুল : মাবূদ ৪/২৬৪; আরো দেখুন: শায়খ আলবানীর জাঈফ আবু দাউদ পৃ: ১৪৯)।

তবে শায়খ আহমাদ শাকের হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ও যে বর্ণনাকারী কারণে হাদীসটি দূর্বল বলা হয়েছে তার উত্তরও তিনি দিয়েছেন। (দেখুন মুসনাদের টীকা ৪/৫৫।)


১৫। তাওবাকরীদের জন্য সফলতা রয়েছে: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَتُوبُوا إِلَى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) (سورة


অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর: ৩১)


১৬। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন:


وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُواْ وَهُمْ يَعْلَمُونَ أُوْلَئِكَ . جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَة مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ (سورة آل عمران: ١٣٥-١٣٦)


অর্থাৎ এবং যারা কোন অশ্লীল কার্য করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে । আল্লাহ ব্যতীত কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে না। তারা সেই ব্যক্তিরা, যাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম!। (সূরা আলে ইমরান: ১৩৫- ১৩৬)।


খ- ক্ষমা প্রার্থনার কতিপয় বাক্য ও তার ফযীলতঃ

১। এমন কতিপয় বাক্য যা পাঠ করলে গুনাহ খাতা ক্ষমা হয়:


হেলাল বিন ইয়াসের বিন যায়েদ -যিনি রাসূল(সাঃ)এর মুক্তকৃত দাস ছিলেন। তিনি তার বর্ণনায় বলেন: আমি আমার পিতাকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি আমার দাদা হতে বর্ণনা করেন;

যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি বলবে:


٣ أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْه

অর্থাৎ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জিব ও সর্বসত্ত্বার ধারক।

তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও সে যুদ্ধের ময়দান হতে পালায়ণ করে থাকে ৷

 সুনানে আবু দাউদ, বিতর নামাযের বিভিন্ন অধ্যায়, ক্ষমা প্রার্থনা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১৫১৪, ৪/২৬৬। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ১/২৮৩।)


২। সায়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ;


শাদ্দাদ বিন আওস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, নাবী (সাঃ) বর্ণনা করেন, সায়্যিদুল ইস্তিগফার হলোঃ এমন বলা:



اَللَّهُمَّ أَنتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنا عَبْدُكَ وَأَنا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوهُ لَكَ بِدَانِي اغفرلي فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت. غْفِرُ اِغْفِرْلِيْ فَإِنَّهُ


অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা। আমি তোমার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। 

আমি যা করেছি তার মন্দ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর তোমার যে নিয়ামত রয়েছে তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও আমি স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না । 


সহীহ বুখারী, দাওয়াত অধ্যায়, ক্ষমা প্রার্থনার ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬৩০৬, ১১/৯৭-৯৮।


যে ব্যক্তি দিনের বেলায় দোয়াটি বিশ্বাসের সাথে পাঠ করে সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতের অধিবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি এ দোয়াটি বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে সকাল হওয়ার পূর্বে মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতের অধিবাসী হবে।

Post a Comment

0 Comments