ভাই, আপনারা তো বলেন সৃষ্টিকর্তা বলে একজন আছেন। উনিই নাকি এই সমগ্র বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন, দেখে শুনে রেখেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, আজ পর্যন্ত তো তার দেখা পেলাম না।
যদি তিনি চান যে আমরা তাকে বিশ্বাস করি, তাহলে কি একবার দেখা দিলে হত না ? না দেখে কোন কিছু বিশ্বাস করা কি বুদ্ধিমানের কাজ ?
সৃষ্টিকর্তাকে দেখা যায় না, তার কথা শোনা যায় না- তাকে বিশ্বাস করা কি খুব অদ্ভুত একটা ব্যাপার না ?”
এরকম প্রশ্ন অনেক অবিশ্বাসীরাই করে থাকেন, বিশ্বাসীদের মনেও এরকম প্রশ্ন এসে যেতে পারে। আসলেই তো- স্রষ্টা তো চান আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি, তাঁকে ভালবাসি, ভয় করি, আদেশ-নির্দেশ মেনে চলি, তাঁর ওপর ভরসা রাখি, নির্জনে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি- ইত্যাদি।
কিন্তু তাঁকে তো দেখাই যায় না। না দেখে এতখানি বিশ্বাস রাখা কি অত্যন্ত অযৌক্তিক একটা ব্যাপার নয় ? চলুন বিষয়টা একটু নেড়ে-চেড়ে দেখি
না দেখে বিশ্বাস বনাম প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাসঃ
অনেকেই “না দেখে বিশ্বাস” আর “কোন রকম প্রমাণ ছাড়া অন্ধ বিশ্বাস” কে এক করে ফেলেন। দু'টোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
ইসলামের অনেক ব্যাপারেই- না দেখে বিশ্বাস রাখতে বলা হয়েছে--আল্লাহর অস্তিত্ব তার মধ্যে অন্যতম। পবিত্র কুরআনের (সুরা-২) সূরা বাক্বারার একদম প্রথমেই মুত্তাকীদের (আল্লাহ ভীরু ও সৎকর্মশীলদের) সংজ্ঞা এভাবে এসেছে :
“আলিফ-লাম-মীম।(এই অক্ষরগুলোর প্রকৃত অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন।অন্য কেউ এগুলোর অর্থ জানে না । --তাফসীর ইবনে কাসীর পৃ: ১৩০ )।
এটা ঐ (মহান) কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলিতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে উপজীবিকা প্রদান করেছি তা হতে দান করে থাকে ।” [সূরা বাকারা ২ : ১-৩ ]
অদৃশ্য বিষয়ে বিশ্বাস রাখাটা তাই ইসলামের এবং অধিকাংশ ধর্মেরই মৌলিক একটা নীতি। অন্যদিকে, ইসলাম কিন্তু মানুষকে প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করতে বলেনি। নবীজী এর মক্কার জীবনী দেখুন- উনি কিন্তু মানুষকে যুক্তিতর্ক ফেলে চোখ-কান বুঝে অন্ধভাবে মানতে বলেননি, বরং প্রায়ই তিনি মানুষকে যুক্তি দেখিয়েছেন, কারণ বুঝিয়েছেন, আবার কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা অলৌকিক মুজিজা (নিদর্শন) দেখিয়ে প্রমাণ দিয়েছেন।
১. নং পয়েন্টঃ ইসলাম না দেখে বিশ্বাস সমর্থন করলেও প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস সমর্থন করে না। কিন্তু ইসলাম যদি আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ দিয়েই থাকে, সেটা নিশ্চয়ই ইন্দ্ৰিয়লব্ধ প্রমাণ নয়। এটা তো আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত না দেখেই বিশ্বাস করতে হচ্ছে। তাহলে ?
উত্তরটা জানতে একটু বিজ্ঞানের কাছে ধর্ণা দেই- কারণ বর্তমান আধুনিক মানুষদের বিজ্ঞানের প্রতি ভরসা একটু বেশিই ।
দুনিয়ার কিছু গায়েব/অদৃশ্য বিষয়ে বিশ্বাস !
* আপনাকে ইলেকট্রিক তারে হাত দিতে বলা হলে হাত দিবেন ? না, আপনি কখনই হাত দিবেন না, কিন্তু তারের ভিতরের কারেন্ট তো দেখা যাচ্ছে না । গায়েব (অদৃশ্য) শক্তি, অথচ আপনি বিশ্বাস করছেন যে তারে হাত দিলেই আপনাকে ঝাকুনী দিয়ে ফেলে দিবে।
* জীবানু অদৃশ্য, খালি চোখে দেখা যায় না। অথচ ডাক্তারের কথায় আপনি না দেখেই বিশ্বাস করছেন । কিন্তু কেন ? অথচ আপনার সৃষ্টিকর্তার কথা না দেখে বিশ্বাস করতে পারবেন না ? (ব্যপারটা কেমন হয়ে গেল না ? )
২. নং পয়েন্টঃ “প্রমাণ” কথাটা বলতে এখানে শুধুমাত্র দার্শনিক বা যুক্তিতর্কের প্রমাণ বোঝানো হচ্ছে না। ইসলামের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে নবীজী কয়েকটা জিনিস আমাদের দিয়ে গেছেন। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, তাঁর সময়কার মানুষের জন্য উনি বিভিন্ন অলৌকিক মুজিজা/নিদর্শন দেখিয়েছিলেন,
যেমন--চাঁদ দু'ভাগ করে ফেলা, যুদ্ধ প্রস্তুতির সময় সামান্য একটু খাবার থেকেই পুরো সৈন্যদলের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলা, ইত্যাদি।
এগুলোর প্রভাব শুধুমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য, আমাদের জন্য অতটা নয়। সমগ্র মানবজাতির জন্য যে অলৌকিক নিদর্শনটা রয়েছে তা হচ্ছে কুর'আনের সাহিত্য।
এর সমতুল্য কিছু তৈরি করা দুনিয়ার মানুষ অথবা জিনের পক্ষেও সম্ভব নয়, কাজেই এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহরই বাণী।
যেমন আল্লাহ বলেন-- “আর আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মত একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
যদি তোমরা না পার এবং কক্ষনো পারবেও না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যা প্রস্তুত রয়েছে কাফিরদের জন্য। [সূরা বাকারা ২: ২৩-২৪ ]
অন্যান্য প্রমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুর'আন এবং হাদীছে আসা বিভিন্ন ভবিষ্যৎ বাণী যেগুলো বর্তমানে সত্য প্রমাণিত হয়েছে---যেমন ফেরআউনের লাশ, যা সামনে আসছে,
সে সমস্ত অসংখ্য প্রমাণগুলো “অদেখা সৃষ্টিকর্তাকে” না দেখে বিশ্বাস করতে সহায়তা করবে.. ইনশ-আল্লাহ।
0 Comments