🔰জ্বীনের আছর ও তার প্রতিকার🔰
🔰জ্বীনের পরিচয়🔰
জ্বীন জাতি আল্লাহ তায়ালার একটি সৃষ্টি। যেমন তিনি ফেরেশতা, মানুষ সৃষ্টি করেছেন তেমনি সৃষ্টি করেছেন জ্বীন। মানুষের মতো তাদেরও বিবেক, বুদ্ধি, অনুভূতিশক্তি রয়েছে। তাদের আছে ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে রয়েছে ভালো জ্বীন ও মন্দ জ্বীন। আল কুরআনে বহু জায়গায় জ্বীনদের কথা বর্ণনা করা :
ومنا من الصالحين ومنا من ليس كذلك كنا على سبل الخير
আর নিশ্চয় আমাদের কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রম । আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত । (সূরা আল জ্বীন : আয়াত-১১)
এ জাতির নাম জ্বীন রাখা হয়েছে, কারণ জ্বীন শব্দের অর্থ গোপন। আরবী জ্বীন শব্দ থেকে ইজতিনান এর অর্থ হলো ইসতেতার বা গোপন হওয়া । যেমন আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-
فلما جن عليه الليل رأى كوكبا قال هذا ربي فلما رأى النجوم قال لا أحب النجوم
অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হলো । (সূরা আল আনআম : আয়াত-৭৬) এখানে জান্না অর্থ হলো, আচ্ছন্ন হওয়া, ঢেকে যাওয়া, গোপন হওয়া ।
তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে বলেই তাদের নাম রাখা হয়েছে জ্বীন। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
يا بني آدم لا يفتننكم الشيطان كما أخرج آباءكم من الجنة ينزع عنهم لباسهم ليريهم سوءاتهم فإنه يراك هو وقومه من حيث لا ترونهم لقد جعلنا الشياطين أولياء للذين لا يؤمنون نعتقد.
নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না। (সূরা আল আরাফ : আয়াত-২৭)
জ্বীনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দিয়ে । মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন-
والجان خلقناه قبل نار جهنم.
আর ইতোপূর্বে জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে ।
(সূরা-হিজর : আয়াত-২৭)
এ আয়াত দ্বারা আমরা আরো জানতে পারলাম যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে জ্বীন জাতি সৃষ্টি করেছেন । ইরশাদ হয়েছে—
·ولقد خلقنا الإنسان من صلصال من طين مسنون {26} وخلقنا الجان من قبل نار الجنة {27}
আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে । আর এর পূর্বে জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে ।
(সূরা-হিজর : আয়াত-২৬-২৭)
আল্লাহ তায়ালা যে উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন সে-ই উদ্দেশ্যে জ্বীনকে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বলেন
-وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
·
.আর আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে । (সূরা আয যারিয়াত : আয়াত-৫৬)
জ্বীনদের কাছেও তিনি নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন
-يا معشر الجن والإنس ألم يأتكم رسل من أنفسكم يتلون عليكم آياتي وينذرونكم لقاء يومكم هذا قالوا اشهدوا على أنفسنا وزالت الحياة الدنيا "وأغروهم وشهدوا على أنفسهم أنهم كانوا كافرين"
হে জ্বীন ও মানুষের দল! তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আগমন করেননি, যারা তোমাদের বিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির । (সূরা আল আনআম : আয়াত-১৩০)
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বিচার দিবসে মানুষের যেমন বিচার হবে তেমনি জ্বীন জাতিকেও বিচার ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
তারা বিবিধ রূপ ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে এসেছে। এমনিভাবে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে বলে আল কুআনের সূরা আন নামলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসমানী কিতাবে যারা বিশ্বাসী-ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলমান তারা সকলে জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে । তারা কেউ জ্বীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। পৌত্তলিক, কতিপয় দার্শনিক, বস্তুবাদী গবেষকরা জ্বীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে । দার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফেরেশতা ও জ্বীন রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। সুন্দর চরিত্রকে ফেরেশতা আর খারাপ চরিত্রকে জ্বীন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বুঝানো হয় । অবশ্য তাদের এ বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহর সম্পূর্ণ পরিপন্থী ।
#ইসলামিক_একাডেমি_এনপি #ইসলাম_ও_পরিবার #পারিবারিক_মূল্যবোধ #সিলাতুর_রহম #কুরআন_ও_সুন্নাহ #পারিবারিক_শিক্ষা #কুরআনিক_পরিবার #হাদিসের_নির্দেশনা #পারিবারিক_সমস্যার_সমাধান #ইসলামিক_লাইফস্টাইল
0 Comments