Ticker

10/recent/ticker-posts/

কুরআন এবং তার কতিপয় সূরা ও আয়াতের ফযীলত

কুরআন এবং তার কতিপয় সূরা ও আয়াতের ফযীলতদৈনন্দিন দোওয়া ও জিকিরের ফযীলত

আল্লাহ তায়ালা তাঁর মহাগ্রন্থ আলকুরআন তাঁর নবীর উপর অবতীর্ণ করেছেন। যার সম্পূর্ণই মুমিনদের জন্য হিদায়েত, শিক্ষা ও রহমত স্বরূপ ।

আল্লাহ তায়ালা তার মধ্য হতে একাংশকে অন্যাংশের উপর মর্যাদা দান করেছেন। তার কতিপয় সূরা ও কতিপয় আয়াতকে বিশেষ বরকতময় ও বিশেষ উপকারী করেছেন। আর এসবের বর্ণনা দলীল-প্রমাণ দ্বারা সুসাব্যস্ত ।

তন্মধ্যে নিম্নে কিছু বর্ণনা করা হলো:


প্রথমত: আলকুরআনুল কারীমের ফযীলত

১। কুরআন হলো: মু'মিনদের জন্য হিদায়েত ও আরোগ্য: আল্লাহ তায়ালা বলেন:


﴿ قُلْ هُوَ للذينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء) (سورة فصلت : ٤٤)

অর্থাৎ বলুন: কুরআন হলো মুমিনদের জন্য পথ প্রদর্শক ও ব্যাধির প্রতিকার । (সূরা ফুসিলাত: ৪৪)


২। কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করলে ১০টি নেকী অর্জন হয়:


আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রাদআল্লা) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর পাঠ করবে,

তার পরিবর্তে তার একটি নেকী হবে আর সে নেকী দশটি নেকীর সমতুল্য। 

আমি বলি না যে, " একটি অক্ষর, বরং আলিফ একটি অক্ষর, লামও একটি অক্ষর, মীমও একটি অক্ষর। (জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত কুরআনের ফলিত সম্পর্কিত অধ্যায়সমূহ, যে ব্যক্তি কুরআনে একটি অক্ষর পাঠ করবে তার সওয়াবের পরিমাণ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০৭৫, ৮/১৮২।

ইমাম তিরমিজী এ হাদীস সম্পর্কে বলেন: “হাসান, সহীহ গরীব”। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা, ৮/১৮২); শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/৯)


৩। দুটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করা অথবা তেলাওয়াত করা দুটি উটের চেয়ে উত্তম এবং উটের সংখ্যার চেয়ে আয়াতের সংখ্যা উত্তম:


উকবা ইবনে আমের(রাদিআল্লা) এ বর্ণনা করেন: (রাসূলুল্লাহসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বের হলেন। আমরা তখন সুফ্ফায় (সুফফা মসজিদে নববীর একটি স্থান, যেখানে নিবেদিত দরিদ্র সাহাবারা আশ্রয় নিত। (আল মুফহিম ২/৪২৯।) 

অবস্থান করছিলাম। তিনি বলেন: তোমাদের মধ্য হতে কে এমন আছে যে, প্রত্যেক দিন সকালে বুতহান অথবা আক্কীক উপত্যকায় গিয়ে সেখান থেকে কোন প্রকার পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়া উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট দুটো উষ্ট্রী নিয়ে আসতে ভালবাসে?


আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তা ভালবাসি। তিনি বললেন: তোমরা কি এরূপ করতে পারো না যে, সকালে মসজিদে গিয়ে মহান আল্লাহর কিতাব হতে দুটো আয়াত শিক্ষা করবে অথবা পড়বে । এটা তার জন্য দুটো উষ্ট্রী হতে উত্তম হবে, তিনটি আয়াত তার জন্য তিনটি উষ্ট্রী হতে উত্তম এবং চারটি আয়াত চারটি উষ্ট্রী হতে উত্তম হবে। এভাবে আয়াতের সংখ্যা উষ্ট্রীর সংখ্যা হতে উত্তম হবে।


(মুসলিম) ( অর্থাৎ চারটির বেশী আয়াত পাঠ করলে, চারটির বেশী উট হতে উত্তম হবে। অতএব পাঁচটি আয়াত পাঠ, পাঁচটি উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপভাবে ছয়টি আয়াত, ছয়টি উট হতে আর সাতটি আয়াত পাঠ, সাতটি উট হতে উত্তম এভাবে যত বেশী আয়াত পাঠ করবে, ততবেশী উট অপেক্ষা উত্তম।


(দেখুন: শারহ আত্‌ তায়বী ৫/১৬৩৪।) (সহীহ মুসলিম, মুসাফিরের নামায ও কসর করার বিধান অধ্যায়, নামাযে কুরআন পাঠ ও তা শিক্ষা গ্রহণ করা পরিচ্ছেদ, হাদীস নয় ২৫১- (৮০৩), ১/৫৫২-৫৫৩)


৪ । রাতে দশটি আয়াত পাঠকারীর উপকার:


(ক) অলসদের খাতায় তার নাম লিখা হবে না:

আবু হুরাইরা (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি রাত্রিকালে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার নাম অলসদের খাতায় লিখা হবে না ।

মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, কুরআনের ফযিলতের অধ্যায়, ১/৫৫৫। এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম হাকেম বলেন: এটি মুসলিমের শর্তে সহীহ। (দেখুন উল্লেখিত টীকা ১/৫৫৫); তার কথাকে হাফেয জাহাবী সমর্থন করেছেন (দেখুন: তালখীস ১/৫৫৫-৫৫৬)।

এ হাদীস সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন: হাদীসটি সহীহ লিগায়রিহী। (দেখনু সহীহ তারগীব ও তারহীব ১/১৬৯।)


(খ) তার জন্য কিনতার (অসংখ্য) পরিমাণ সওয়াব লিপিব্ধ করা হয়

ফুযালাহ বিন উবাইদ ও তামীম আদদারী (রাযিয়াল্লা আনহুমা) হতে বর্ণিত, তারা নবী হতে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: যে ব্যক্তি রাত্রিকালে দশটি আয়াত পাঠ করল, তার জন্য কিনতার লিখা হলো। আর কিনতার হলো: দুনিয়া ও তাতে য রয়েছে তা অপেক্ষা উত্তম। কিয়ামত দিবসে তোমার প্রতিপাল বলবেন: 

তুমি কুরআন পাঠ কর ও এক আয়াতের বিনিময় এক তলা উপরে উঠ। এমনকি সে তার মুখস্ত থাকা শেষ আয়াত পাঠ কর পর্যন্ত উঠতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বলবেন: তুমি ধারন কর।

অত:পর বান্দা হাত দ্বারা ইশারা করে বলবে:“হে আমার প্রতিপালক! তুমিই তো সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী।”

অত:পর আল্লাহ তায়ালা বলবেন: “তুমি এক হাতে স্থায়ী জান্নাত অন্য হাতে নেয়ামতসমূহ ধারন কর ।”

অর্থাৎ তুমি তোমার ডান হাতে চিরস্থায়ী জান্নাত ও বাম হাতে নিয়ামত সম ধারন কর । (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীবের টীকা ১/৪০৬।)

তারগীব ও তারহীব হতে সংগ্রহীত, নফল এবাদব অধ্যায়, রাত্রি জেগে এবাদত করার প্রতি উৎসাহ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৪১, ১/৪৩৯।

এ হাদীস সম্পর্কে হাফেয মুসযিরী বলেন: তাবারানী ফিল কাবীর ওয়ার আওসাতে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। তাতে ইসমাঈল বিন আয়্যাশ বর্ণন করেন শামিয়য়ীন হতে বর্ণনা করেছেন, তার বর্ণনাকতৃ হাদীস অধিকাংশ। (মুহাদ্দীস গ্রহণ করেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ১/৪৩৯); শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ১/৪০৬।)


৫। একশত আয়াত পাঠকারী সারা রাত্রি এবাদতের সমতুল্য সওয়াবের অধিকারী:

তামীম আদদারী এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি রাত্রিকালে একশত আয়াত পাঠ করবে, তার আমলনামায় সারা রাত্রি এবাদত করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। (আহমাদ) (মুসনাদ হাদীস নং ১৬৯৫৮, ২৮/১৫৬। শায়খ আরনাউত ও অন্যান্যরা বিভিন্ন সনদের বিচারে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: মুসনাদের টীকা ২৮/১৫৬।)


৬। হাজার আয়াত পাঠকারীর অসংখ্য নেকীকারীদের খাতায় নাম লিখা হবে:

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ এ হতে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: যে ব্যক্তি রাত্রিকালে হাজার আয়াত পাঠ করে, তার নাম মুকানতিরিনদের অর্থাৎ যারা অধিক সম্পদের অধিকারী। হাফেয মুনযির বলেন: অর্থাৎ যাদের জন্য বহু পরিমাণে নেকী লেখা হয়। (দেখুন: তারগীব ও তারহীব ১/৪৪০।) আল্লামা সানদী বলেন: এর অর্থ হলো: বহু পরিমাণ নেকী । অনেকে বলেন: এই অর্থ হলো: যাদের আমল নামায় অসংখ্য নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে (দেখুন: আওনুল মাবূদ ৪/১৯২।)


খাতায় লিখা হয়। (আবু দাউদ) (সুনানে আবু দাউদ, সুন্দর করে ও তারতীল সহকারে কুরআন তেলাওয়া অধ্যায়, কুরআন ভাগ করা পরিচ্ছেদ, ১৩৯৫, ৪/১৯২ নং হাদীসের অং বিশেষ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনা আবু দাউদ ১/২৬৩; ও সহীহ তারগীব ও তারহীব ১/৪০৬।)

বি: দ্র: তারগীব ও তারহীব কিতাবে রয়েছে: সূরা মুলক থেকে কুরআনের শেষ পর্যন্ত এক হাজার আয়াত রয়েছে। এ সম্পৰে আল্লাহই ভাল জানেন । (তারগীব ও তারহীব ১/৪৪০।


৭। কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যায়নের জন্য অবস্থানকারীদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে:


৮। তাদেরকে রহমত ঢেকে নেয়:


৯। ফেরেস্তারা তাদেরকে বেষ্টন করে থাকে:


১০ । আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ফেরেস্তাদের নিকট তিনি তাদের উল্লেখ করে থাকেনঃ


আবু হুরাইরা:(রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন রাসূলুল্লাহ (রাসূলুল্লাহসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: কোন সম্প্রদায় যখন আল্লাহ জিকির করার জন্য আল্লাহ কোন ঘরে বসে তখন ফেরেস্তারা তাদেরকে বেষ্টন করেন, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ছেয়ে নেয়, তাদের উপর শান্তির ধারা বর্ষণ হয়, আল্লাহ তার নিকটবর্তী ফেরেস্তাদের নিকট তাদের কথা আলোচনা করেন। (মুসলিম) (সহীহ মুসলিম, জিকির, দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়, কুরআন তেলাওয়া ও জিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলতের পরিচ্ছেদ, ৩৮-(২৬৯৯), ৪/২০৭৪ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।)


১১। কুরআন পাঠকারীদের জন্য কুরআনের সুপারিস:

(ক) আবু উমাম আলবাহেলী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: তোমরা কুরআন পাঠ কর, কেননা নিশ্চয়ই তা কিয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য সুপারিসকারী হিসেবে আসবে। (মুসলিম) (সহীহ মুসলিম, মুসাফির ব্যক্তির নামায ও কসর করার বিধান অধ্যায় । কুরআন পাঠ ও বিশেষ করে সূরা বাকারা পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, ২৫২- (৮০৪), ১/৫৫৩ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।)


(খ) আবু হুরাইরা এ নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: কিয়ামত দিবসে কুরআন পাঠকারীকে নিয়ে আসা হবে,

 অত:পর কুরআন বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তাকে পরিধান করাও । 

অত:পর তাকে সম্মানের মুকুট পরিধান করানো হবে ।

তারপর আবার বলবে: হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাকে আরো কিছু পরিধান করাও।

অত:পর তাকে সম্মানের মুকুট পরিধান করানো হবে ।

তারপর কুরআন বলবে: হে আমার প্রতিপালক! তুমি তার উপ সম্ভ্রষ্ট হও।

অত:পর বলা হবে, তুমি কুরআন পাঠ করতে থাক, আর উপা উঠতে থাক। আর প্রতিটি আয়াতের পরিবর্তে একটি করে নেকী করা হবে। 

(মুসলিম) (জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত কুরআনের ফযিলত অধ্যায়, ব্যক্তি কুরআনে একটি অক্ষর পাঠ করবে তার সওয়াবের পরিমাণ সম্পি পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০৭৬, ৮/১৮৩।

ইমাম তিরমিজী এ হাদীস সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ, (দেখ উল্লেখিত টীকা ৮/১৮৩); শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দে সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১০।)


১২ । কিয়ামতে কুরআন পাঠকারীর জন্য সুমহান মর্যাদা:

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত তিনি তার বর্ণনায় বলেন: রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: কুরআ পাঠকারীকে বলা হবে, কুরআন পাঠ করতে থাক আর উপরে উঠা থাক, এবং তুমি যেভাবে তারতীল সহকারে দুনিয়াতে পাঠ করা সেভাবেই পাঠ কর। নিশ্চয়ই তোমার অবস্থান হবে সেখানে যেখা তোমার কুরআন পাঠ করা শেষ হবে । 

(আবু দাউদ ও তিরমিজী) ( সুনানে আবু দাউদ, রাত্রি জেগে ইবাদত অধ্যায়, বিতর নামাযের বিভিন্ন পন্থার অধ্যায়, সুন্দর করে কি ভাবে তেলাওয়াত করবে তার পরিচ্ছেদ, হাদিস নং ১৪৬১, ৪/২৩৭, আর হাদীসে মূল বাক্যগুলি তার । 

এবং জামে তিরমিজী, রাসূলুল্লাহসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হতে বর্ণিত কুরআনের ফযিলত অধ্যায় হাদীস নং ৩০৮১, ৮/১৬৮-১৮৭। ইমাম তিরমিজী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ৮/১৮৭; এবং সহীহ সুনানে আবু দাউদ, ৮/১৮৭; ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১০।)


দ্বিতীয়ত: কতিপয় সূরা ও আয়াতের ফযীলত

(ক) সূরা ফাতেহা দ্বারা ঝাড়ফুক করা:


(১) সূরা ফাতেহা দ্বারা দংশিত রুগীকে ঝাড়ফুক:

আবু সাইদ(রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা চলছিল।

অত:পর তাঁরা আরবের কোন গ্রামে অবতরণ করে তাদের কাছে মেহমানদারী দাবী করলো। কিন্তু তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। 

অতঃপর গোত্রের সর্দার দংশিত হলো অর্থাৎ তাকে বিষাক্ত সাপ বা বিচ্ছু দংশন করে। এরপর তারা তাকে আরোগ্যের জন্য সকল প্রকার উপায় অবলম্বন করার পরেও তার কোন ফল হলো না ।

অত:পর তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি বলল: তোমরা যদি ঐ মুসাফির দলের নিকট যেতে, যারা আমাদের নিকটেই অবস্থান নিয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কিছু জানতে পারে ।

অতএব, তাদের নিকট তারা গেল,( জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে ইমাম বাযযার বৃদ্ধি করেন: অতপর তারা তাদেরকে বলল: “আমরা জানতে পেরেছি তোমাদের সঙ্গি নাকি নূর ও শিফা- আরোগ্য নিয়ে আগমন করেছেন” তারা বলল: হাঁ। (ফাতহুল বারী ৪/৪৫৬।)

 এবং বলল হে মুসাফির দল! আমাদের নেতা দংশিত হয়েছে, আমরা সকল প্রকার উপায় অবলম্বন করেছি, কিন্তু কোন কাজ হয়নি ।

তোমাদের মধ্যে কি কেউ কিছু জানে?


তাদের মধ্যে একজন বলল: হা, জানি। আমি আল্লাহ তায়ালার শপথ করে বলছি, আমি ঝাড়ফুক করতে পারি। কিন্তু আল্লাহর শপথ। আমরা তোমাদের কাছে মেহমানদারীর দান করেছিলাম কিন্তু তোমারা তা করোনি। 

সুতরাং আমাদেরকে একপাল ছাগল না দেয়া পর্যন্ত আমি ঝাড়ফুক করব না।

অত:পর তারা তাদের সাথে এক পাল ছাগল দিবে বলে মীমাংসা করল।

অতঃপর তিনি রোগীর নিকট গিয়ে দংশিত জায়গায় অল্প খু মিশ্রিত ফুক ও সূরা ফাতেহা পাঠ করতে লাগলেন।

( আমাশ হতে বর্ণিত, তিনি সাত বার পাঠ করেছিলেন, (দেখুন: উল্লেখি টীকা ৪/৪৫৬।) আরো দেখুন: জামে তিরমিজী, চিকিৎসা অধ্যায়, ঝাড়ফুক তার পরিবর্তে অর্থ গ্রহণ করা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ২১৪২, ৬/১৮৯-১৯০০। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ২/২০৬।) 

তারপর দেখা গেল একেবারে সুস্থ হয়ে গেল, যেন তাকে বন্দি অবস্থার পর তার বাঁধন খুলে দেয়া হলো। তারপর সে চলতে লাগল, যেন তার কিছুই ছিল না। বর্ণনাকারী বলেন: তাদের সাথে যে এক পাল ছাগলের চুক্তি ছিল, তা তারা পূর্ণ করল।

তাদের মধ্যে কেউ বলল: এগুলিকে বন্টন করা হোক ।

আর যে ব্যক্তি ঝাড়ফুক করেছিলে, সে বলল: তোমরা এগুলিকে কিছুই করো না, আমরা ( রাসূলুল্লা হসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নিকট গিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা

বর্ণনা করব, দেখি তিনি কি ফয়সালা করেন।

তারা ( রাসূলুল্লা হসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নিকট গিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করল । 

অতঃপর তিনি বলেন: তুমি কেমনে জানলে যে সূরা ফাতেহা ঝাড়ফুকের সূরা? 

( দারাকুতনীর বর্ণনায় রয়েছে: সুতরাং আমি বললাম: হে রাসূল (সাঃ) আমার অন্তরে যেন কোন কিছু ইলহাম হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ৪/৪৫৭)

অতঃপর বল্লেন: তোমরা ঠিক কাজই করেছ। ছাগলগুলিকে বন্টন করো, আর আমার জন্য তোমাদের সাথে এক ভাগ বসাও ।

তারপর নবী হেসে ফেলেন।( সহীহ বুখারী, আল ইজারা অধ্যায়, আরবে সূরা ফাতেহা দ্বারা ঝাড়ফুক করলে কি দেয়া হয় এ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ২২৬, ৪/৪৫৩।

অন্য বর্ণনায় এসেছে: অত:পর রাসূলুল্লাহ বললেন: বললেন: এ সূরা দ্বারা যে ঝাড়ফুক করা যায় তা তুমি কোথা হতে জেনেছ? তোমরা সুন্দর কাজই করেছো। তোমরা বন্টন করে নাও এবং তাতে আমার জন্যও একটি ভাগ বসাও। (দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ২/৭৩৯।)


(২) ফাতেহা পাঠ করে পাগলের উপর দম করলে আরোগ্য লাভ হয়:

খারেজাহ বিন আসসুলত আততামীমী তার চাচা হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সাঃ) এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করে ফিরছিলেন। অতঃপর ফেরার পথে এক গোষ্টির পার্শ্ব দিয়ে অতিবাহিত হবার সময় দেখতে পেলেন যে, তাদের এক পাগল লোহার জিঞ্জির দিয়ে বাধা। তার পরিবারের এক ব্যক্তি বলল: “আমরা শুনেছি যে, তোমাদের এই সাথী উত্তম কিছু নিয়ে এসেছে। অতএব. তোমাদের নিকট এমন কিছু আছে কি, যাদ্বারা তোমারা ও পাগলের চিকিৎসা করতে পারবে?”

অত:পর আমি সূরা ফাতেহা দ্বারা ঝাড়লাম, তারপর সে সুস্থ হয়ে গেল ।


(আমি তাকে সূরা ফাতেহা পাঠ করে ঝাড়লাম, অত:পর সে ভাল হয়ে গেল ।)

আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় এসেছে: আমি তিন দিন যাবৎ তাকে সূরা ফাতেহা পাঠ করে সকালে ও সন্ধ্যায় ঝাড়লাম। আমি প্রতিবার সূরা ফাতেহা পাঠ করে যখন শেষ করতাম, থুথু একত্র করে নিক্ষেপ করতাম, তারপর সে যেন বাধন মুক্ত হয়ে গেল । (দেখুন: সুনানে আবু দাউদ, চিকিৎসা অধ্যায়, কিভাবে ঝাড়ফুক করা হবে? এ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, ৩৮৯০/২৭৭ নং হাদীসের অংশ বিশেষ। এ =হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ২/৭৩৮)


তারপর তারা আমাকে একশত ছাগল প্রদান করল। 

অত:পর আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর নিকট এসে বিস্তারিত জানালাম তিনি বললেন: তুমি কি শুধু সূরা ফাতেহা দিয়েই ঝেড়েছ? 

হাদীসের এক বর্ণনাকারী মুসাদ্দাদ অন্যত্রে বলেন: এর অর্থ হলো “তুমি কি এ ব্যতীত অন্য কিছু পড়নি?

আমি বললাম: না ।

রাসূল (সাঃ) বলেন: “তুমি ছাগলগুলি নিয়ে যাও। লোকেরা বাতিল ঝাড় ফুক করে অর্থ খায় আর তুমি তা শরীয়ত সম্মত ঝাড় ফুক করে খাচ্ছ।( সুনানে আবু দাউদ, চিকিৎসা অধ্যায়, কিভাবে ঝাড়ফুক করা হবে? এ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৮৯১, ১০/২৯১, এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ৭৩৮।)


খ। সূরা বাকারাহঃ

প্রথমত: পরিপূর্ণ সূরাটি পাঠ করার উপকারিতা:


১। এ সূরা পাঠ করা বরকত আর পাঠ না করা হলো পরিতাপ:

আবু উমামা আলবাহেলী (রাদিআল্লা) তাঁর বর্ণনায় বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি: তিনি তার বর্ণনায় বলেন: তোমরা সূরা বাকারাকে পাঠ করো, কেননা এ সূরা পাঠ করা হলো বরকত আর পাঠ না করা হলো পরিতাপের কারণ। 

এ সূরা যে পাঠ করে তাকে কোন প্রকার যাদু আক্রমণ করতে পারে না। 

( দেখুন: সহীহ মুসলিম, মুসাফির ও তার নামায আদায়ের বিধান, কুরআন পাঠ করা ও বিশেষ করে সূরা বাকরাহ পাঠ করার ফযিলত অধ্যায়, ২৫২- (৮০৪), ১/৫৫৩ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।)


(২) যে বাড়ীতে এ সূরা পাঠ করা হয় সে বাড়ীতে শয়তান প্রবেশ করতে পারবে না:

আবু হুরাইরা এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরে পরিণত করো না। নিশ্চয়ই যে বাড়ীতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে বাড়ীতে শয়তান প্রবেশ করে না।(জামে তিরমিজী, রাসূল্লা (সাঃ) হতে বর্ণিত কুরআনের ফযিলত, সূরা বাকারা ও আয়াতুল কুরসী সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে সে সম্পর্কিত অধ্যায়, হাদীস নং ৩০৩৭, ৮/৮৩৬।

এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ, (দেখুন: উল্লেখিত টীকা, ৮/১৩৬); শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩৪।)


(৩) যে বাড়ীতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, তা শুনে, শয়তান সে বাড়ী থেকে পালায়ন করে:

আবু হুরাইরা (রাদিআল্লা)  হতে বর্ণিত তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরে পরিণত করো না। নিশ্চয় শয়তান ঐ বাড়ী থেকে পলায়ন করে যে বাড়ীতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়। (সহীহ মুসলিম, মুসাফির ও তার নামাযের বিধান অধ্যায়, বাড়ীতে নফল নামায আদায় করা উত্তম, তবে মসজিদে পড়াও যায়েজ অধ্যায়, হাদীস নং ২১২-(৭৮০), ১/৫৩৯)।


দ্বিতীয়ত: আয়াতুল কুরসী

(১) এ আয়াত পাঠকারী শয়তান হতে নিরাপদঃ 

নিম্নে তার কতিপয় দলীল:

(ক) আবু হুরাইরা (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ্ আমাকে রামজান মাসে জাকাতের মালের প্রহরী নিযুক্ত করেন, প্রহরায় থাকার সময় এক ব্যক্তি এসে হাত দ্বারা খাদ্য নেওয়া শুরু করে, আমি তাকে ধরে বললাম: আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ এর নিকটে নিয়ে যাব, তার পূর্ণ ঘটনার পর (হাদীসটি বর্ণনা করল) পূর্ণ হাদীসটি বুখারীতে দেখুন, ওকালা অধ্যায়, যদি কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির উপর কোন কিছু ন্যস্ত করে, আর ন্যস্তকৃত ব্যক্তি কোন কিছু ছেড়ে দিল, আর ন্যস্তকারী ব্যক্তি তা অনুমতি দান করল, তা বৈধ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ..... ।

হাদীস নং ২৩১১, ৪/৪৮৭। )..... অত:পর সে বলে: তুমি যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তবে সারা রাত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন প্রহরী থাকবে, সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তী হতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ এ ঘটনার বর্ণনা শুনার পর তিনি বলেন: সে সত্যই বলেছে, তবে সে মিথ্যাবাদী, সে ছিল শয়তান। (বুখারী) 

( দেখুন, উল্লেখিত টীকা, সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়, ইবলীস ও তার দলের বর্ণনা সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ২৩৭৫, ৬/৩৩৫-৩৩৬।)


(খ) উবায় বিন কাব হতে বর্ণিত, তিনি যখন শয়তানকে পাকড়াও করলেন, তখন তাকে বল্লেন: তোমাদের অনিষ্ট হতে বাঁচার উপায় কি?

সে বলল: সূরা বাকারা হতে আয়াতুল কুরসী “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু...” পাঠ করবে?

তিনি উত্তর দেন, হাঁ।

সে বলল: আপনি যদি সকালে পাঠ করেন, তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবেন। আর সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদে থাকবেন।

উবায় (রাদিআল্লা)  বলেন: আমি সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর নিকট গিয়ে বিস্তারিত জানালে তিনি বলেন: দুষ্টু-অনিষ্টকারী সত্যই বলেছে।

( কিতাব সুনানে কুবরা, তৃতীয় খণ্ড, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায় হতে সংগৃহীত, জিন ও শয়তান হতে কিভাবে নিরাপদে থাকা যায় সে আলোচনা, হাদীস নং ১০৭৯৭/২, ৬/২৩৮)। 

আরো দেখুন: আল ইহসান ফি তাকরীবে সহীহ ইবনে হিব্বান, কিতাবুর রাকায়েক, কুরআন পাঠের অধ্যায়, আয়াতুল কুরসী পাঠ করে শয়তান হতে নিরাপদ থাকার অধ্যায় । -আল্লাহ তায়ালা তাদের অনিষ্ট হতে আমাদেরকে রক্ষা করুন। - হাদীস নং ৭৮৪, ৩/৬৩-৬৪।

আরো দেখুন: মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, কুরআনে ফযিলতের অধ্যায়, ১/৫৬২; আর হাদীসের মূল বাক্যগুলি তার। 

আরো দেখুন: মাজমাউয আযযায়েদাহ, জিকি অধ্যায়, সকাল ও সন্ধ্যায় কি পাঠ করতে হয় সে সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, ১০/১১৭-১১৮।

ইমাম হাকেম এ হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন এবং হাফেয যাহাবী সমর্থন করেছেন। (দেখুন: মুসতাদরাক ১/৫৬২; এবং তালখীস ১/৫৬২)। 

হাফেয হায়সামী এ সম্পর্কে বলেন: এ হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন, বর্ণনাকারী সবাই শুদ্ধ। ( মুজাম্মাহ আযযায়েদাহ ১০/১১৮/); এ হাদীস সম্পর্কে শায়খ আরনাউত বলেন: সনদ খুবই শক্তিশালী। 

(দেখুন: আল এহসান ফি তাকরীব সহীহ ইবনে হিব্বন এর টীকা দ্রষ্টব্য ৩/৬৪।)


(গ) আবু আইয়ূব আল-আনাসরী (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত- সুদীর্ঘ হাদীস-  তাতে রয়েছে: আবু আইয়ূব (রাদিআল্লা) যখন তৃতীয় বারের মত শয়তান চোরকে ধরে বললেন: আজ তোমাকে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর নিকট  নিয়ে না গিয়ে কোন ক্রমেই ছাড়ব না ।

সে বলল: আমি তোমার জন্য এমন কিছু স্মরণ রেখেছি, আর তা হলো আয়াতুল কুরসী, তুমি প্রত্যেহ বাড়ীতে পাঠ করবে, তবে তোমার বাড়ীতে শয়তান ও অন্যান্য কেউ নিকটবর্তী হতে পারবে না ৷

তিনি নবী (সাঃ) এর নিকট আসার পর, তিনি বলেন: তোমার বন্দির খবর কি?

তিনি বলেন: সে কি বলেছে, সে সম্পর্কে আমি তাঁকে বিস্তারিত জানালাম ।

তিনি বল্লেন: সে সত্যই বলেছে, তবে সে মিথ্যাবাদী।( মুসনাদ, হাদীস নং ২৩৫৯২, ৩৮/৫৬৩; এবং জামে তিরমিজী, কুরআনের * ফযিলত অধ্যায়, সূরা বাকারা ও আয়াতুল কুরসীর বর্ণনা সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০৪০, ৮/১৪৮-১৫০, তারগীব ও তারহীব ২/৩৭৪); শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন । 

(দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/৪।)


উল্লেখিত হাদীস হতে যা বুঝা গেল:

(ক)। যে ব্যক্তি ঘুমের সময় আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একজন রক্ষাকারী থাকবে আর সকাল হওয়া অবধি শয়তান তার নিকটবর্তী হতে পারবে না।


(খ) এ আয়াত পাঠকরী সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও সন্ধ্যা হতে সকাল পর্যন্ত শয়তান হতে নিরাপদে থাকবে।


(গ) এ আয়াত বাড়ীতে পাঠ করলে শয়তান ও মানুষের অনিষ্টকারী সর্ব কিছু দূর হয়।

২। ফরজ নামায ও অন্যান্য নামাযান্তে পাঠকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হিফাযত রয়েছে:


হাসান বিন আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে অন্য নামায আসার আগ পর্যন্ত আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। 

(তাবারাণী)( তারগীব ও তারহীব হতে সংগৃহীত, জিকির ও দোয়া অধ্যায়, ফরজ নামাযান্তে আয়াত ও জিকির পাঠ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান অধ্যায়, হাদীস নং ৭, ২/৪৫৩। হাফেয মুনজিরি ও হাফেয হায়সামী এ হাদীসে সনদকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা, ২/৪৫৩; এবং মাজমুয যাওয়েয়েদ ১০/১০৯)।


৩। প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে এ আয়াত পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশের বাধা শুধু মাত্র মৃত্যু:

আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, জান্নাতে প্রবেশে তার মৃত্যুই শুধু বাধা। (ইমাম নাসায়ী, ইবনে হিব্বান ও তাবারাণী।) 


( কিতাবুস সুনানুল কুবরা, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে তার সওয়াব সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৯৯২৮/১, ৬/৩০; এবং তারগীব ও তারহীব, জিকির ও দোয়া অধ্যায়, প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াত ও জিকির পাঠ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬, ২/৪৫৩, এবং মাজমাউয যাওয়ায়েদ, জিকিরের অধ্যায়, নামযান্তে জিকির করার বিধান পরিচ্ছেদ, ১০/১০২)।


হাফেয ইবনে হাজার হাদীসটিকে হাসান ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: নাতায়েজুল আফকার ২/২০৩, সহীহ হাদীস সিরিজ ২/৬৯৭-৬৯৮)


তৃতীয়ত: সূরা বাকারার শেষাংশ পাঠ

এ সম্পর্কে নিম্নে কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো: 

১। পাঠ কারীর জন্য যথেষ্ঠ:

আবু মাসউদ এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: নবী এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত পাঠ করবে তার জন্য তাই যথেষ্ঠ হবে। (বুখারী) ( সহীহ বুখারী, কুরআনে ফযিলত অধ্যায়, সূরা বাকারার ফযিলত পরিচ্ছেদ হাদীস নং ৫০০৯, ৯/৫৫।


পাঠকারীর জন্য যথেষ্ঠ হওয়ার ব্যাখ্যা:

আয়াত দুটি তেলাওয়াত: রাত জেগে কুরআন পাঠ করা হতে যথেষ্ঠ। তা নামাযে পাঠ করাই হোক বা নামায ছাড়া পাঠ করাই হোক ।

কারো মতেঃ সকল প্রকার অনিষ্ট হতে নিরাপদে থাকার জন্য এটাই যথেষ্ট ।

কারো মতে: শয়তানের অনিষ্ট হতে নিরাপদের জন্য এটাই যথেষ্ট কারো মতে: মানুষ ও জ্বিনের অনিষ্ট হতে নিরাপদের জন্য এটাই যথেষ্ট ।

হাফেজ ইবনে হাজারের মতে: উল্লেখিত সবগুলি উদ্দেশ্য রাখাও বৈধ । আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।( দেখুন: ফাতহুল বারী ৯/৫৬।


২। যে ঘরে আয়াত দুটি তিন রাত্রি পাঠ করা হয় সে ঘর থেকে শয়তান দূর হয়:

নু'মান বিন বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ভূমন্ডল ও নভোমন্ডল সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লেখেন। সেখান থেকে দুটি আয়াত অবতীর্ণ করে তা দ্বারা তিনি সূরা বাকারা খতম করেন। এ আয়াত দুটি যে ঘরে তিন রাত্রি পাঠ করা হবে, শয়তান সে ঘরের নিকটবর্তী হবে না।( মুসনাদে দারেমী, সুনানে দারেমী নামে পরিচিত, কুরআনের ফযিলত অধ্যায়, সূরা বাকারার প্রথমাংশ ও আয়াতুল কুরসীর ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৪৩০, ৩/২১৩২, শায়খ হুসাইন সেলিম হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছে (দেখন: দারেমীর টীকা ৩/২১৩২।)


৩। যে ব্যাক্ত সূরার শেষ আয়াতে বর্ণিত দোয়া করবে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন:

ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি

তার বর্ণনায় বলেন: যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হলো:

অর্থাৎ “আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই। তোমদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ তার হিসাব তোমাদের নিকট হতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে খুশী শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান।” (সূরা বাকারা: ২৮৪)


তিনি বলেন: তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবীদের উপর কঠিন হয়ে পড়ল। অত:পর তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট সওয়ারীতে আরোহন করে এলো, এবং বলল: হে আল্লাহর রাসূল! “আমাদের উপর অনেক আমল চাপানো হয়েছে, যা আমরা আদায় করতে অক্ষম, যেমন নামায, রোযা, জিহাদ এবং সাদকা করা। তবে আপনার উপর এ আয়াতটিতে যা অবতীর্ণ হয়েছে, এ তো আমরা পালন করতে অপারগ।”


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বল্লেন: তোমাদের পূর্বে যে দুই সম্প্রদায়কে (ইয়াহুদী। ও খৃষ্টান) গ্রন্থ দেয়া হয়েছিল, তোমরা কি তাদের মত বলতে চাও?

অর্থাৎ “আমরা শ্রবণ করলাম তবে মানলাম না?” 

বরং তোমরা বল:

অর্থাৎ “আমরা শুনেছি ও পালন করেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর প্রত্যাবর্তন তোমারই নিকট” ।

সুতরাং তারা বলল:

( سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

অর্থাৎ “আমরা শুনেছি ও পালন করেছি, হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর প্রত্যাবর্তন তোমারই নিকট” । অত:পর যখন তারা তা পড়ল ও তাদের জবান এর অনুগত হলো: তারপরই আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন:

آمَنَ الرَّسُولُ بمَا أُنزِلَ إِلَيْه من رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلِّ آمَنَ بالله وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبه وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ

অর্থাৎ: “রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহে, তার ফেরেস্তাগণে, তার কিতাবসমূহে, এবং তার রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছে। তারা বলে আমরা রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না, “আর তারা বলে: আমরা শুনেছি ও পালন করেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর প্রত্যাবর্তন তো তোমারই নিকট”। (সূরা বাকারা ২৮৫)


যখন তারা এরকম করল, তখন আল্লাহ তায়ালা আয়াতটির হুকুম বহীত করে, অত:পর আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করেন:


لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا﴾ (سورة البقرة ۲۸٦)

অর্থাৎ “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই । হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না। (সূরা বাকারা: ২৮৬) তিনি বল্লেন: হ্যাঁ ।


( অন্য বর্ণনায় এসেছে: তিনি বলেন: আমরা মেনে নিলাম। (দেখুন: সহী মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, আল্লাহ তায়ালা সাধ্যানুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করে পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ২০০-(১২৬), ১/১১৬)।

وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذينَ من قَبْلنَا (


অর্থাৎ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না ।

তিনি বললেন, হ্যাঁ। ( অন্য বর্ণনায় এসেছে: তিনি বলেন: আমি মেনে নিলাম । (দেখুন: উল্লেখিত টীকা, পৃ: ১/১১৬)।

(رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا به )

অর্থাৎ: হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই ।

তিনি বলেন: হাঁ ।

(وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ)

অর্থাৎ: আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জয়যুক্ত কর। (সূরা বাকারা: ২৮৬) তিনি বললেন: হা । (অন্য বর্ণনায় এসেছে: তিনি বলেন: আমি মেনে নিলাম । (দেখুন: সহীহ মুসলিম ১/১১৬)। (উল্লেখিত টীকা, হাদীস নং ১৯৯-(১২৫), ১/১১৫।)


(খ) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

একদা জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) নবী এর নিকট বসে ছিলেন, এমতাবস্থায় উপর থেকে একটা শব্দ শুনতে পেয়ে উপরের দিকে মাথা উঠালেন। অতঃপর বল্লেন: এ হলো দুনিয়ার আকাশের একটি দরজা যা আজ খোলা হলো এর আগে কখনো খোলা হয়নি আর সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেস্তা অবরতণ করলেন। এই ফেরেস্তা দুনিয়াতে অবতরণ করলেন, তিনি এর পূর্বে কখনো দুনিয়াতে অবতরণ করেননি। অত:পর তিনি সালাম জানালেন এবং বল্লেন: আপনি দুটি এমন জ্যোতির সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেয়া হয়েছে, আপনার পূর্বে কোন নবীকে তা দেয়া হয়নি । আর তা হলো: সূরা ফাতেহা ও সূরা বাকারার শেষ অংশের দুটি। এগুলির যে কোন অক্ষর পাঠ করবেন, তার ফযিলত পেয়ে যাবেন। (সহীহ মুসলিম, মুসাফির ও তার কসর নামাযের বিধান অধ্যায়, সূরা ফাতেহা ও সূরা বাকারার শেষাংশের ফযিলত । হাদীস নং ২৫৪-(৮০৬), ১/৫৫৪।)


(গ) সূরা বাকারা ও আলে ইমরান পাঠের উপকারিতা:

আবু উমামা আল-বাহেলী হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি: তিনি বলেন: তোমরা কুরআন পাঠ করো, কেননা তা কিয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য সুপারিশ কারী হিসেবে উপস্থিত হবে।।

আর তোমরা দুই আলোক বর্তিকা সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান পাঠ করো, কেননা এদুটি কিয়ামতের দিন মেঘ মালা অথবা ছায়া দানকারী অথবা পাখির দুটি দলের ঝাঁকে ঝাঁকে আসার মত হবে যা ঝাকের মত পাঠকারীর পক্ষ হতে ঝগড়া করবে। (মুসলিম) ( হীহ মসলিম, মুসাফির ও তার কসর নামাযের বিধান অধ্যায়, কুরআন ও বিশেষ করে সূরা বাকারার পাঠের ফযিলত অধ্যায়, ২৫২-(৮০৪(,১/৫৫৩ নং হাদীসে অংশ বিশেষ )।


(ঘ) তাসবীহ দ্বারা আরম্ভ হয়েছে এমন সূরাগুলি পাঠ করা 

( যে সূরাগুলি তাসবীহ শব্দ দ্বারা আরম্ভ হয়েছে: যেমন (সুবহানা), (সাব্বেহ আদেশ সূচক), (য়ূসাব্বিহু), (সাব্বাহা অতীত কালের শব্দ)। যেমন সূরা বানী ইস্রাঈল, সূরা হাদীদ, সূরা হাশর, সূরা আসসফ, সূরা জুমআ, সূরা তাগাবুন ও সূরা আ'লা এ সাতটি। (দেখুন: তুহফাতুল আহওয়াজী ৮/১৯২।)

এরবাজ বিন সারিয়া হতে বর্ণিত, নবী ঘুমানোর পূর্বে তাসবীহ দ্বারা আরম্ভ হয়েছে এমন সূরাগুলি পাঠ করতেন এবং বলেন: এগুলির মধ্যে এক আয়াত এমন যা সহস্র আয়াত অপেক্ষা উত্তম ( জামে তিরমিজী, কুরআনের ফযিলত অধ্যায়, হাদীস নং ৩০৮৯, ৮/১৯২। ইমাম তিরমিজী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ৮/১৯২; ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১১/১)


(ঙ) সূরা কাহফের উপকারিতা:

১। সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত যে হিফজ করল দাজ্জাল হতে সে মুক্তঃ 

আবুদ দারদা (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম থেকে দশটি আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জাল থেকে নিরাপদে থাকবে।

( সহীহ মুসলিম, মুসাফির ও কসর নামাযের বিধান অধ্যায়, সূরা কাহাফ ও আয়াতুল করসীর ফযিলত, হাদীস নং ২৫৭-(৯০৮), ১/৫৫৫)।


২। সূরা কাহাফ পাঠ করলে প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়:

বারা (রাদিআল্লা) এ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি সূরা কাহফ পাঠ আর করছিল, আর তার পার্শ্বে দুটি রশি দ্বারা একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। তাকে এক খণ্ড মেঘমালা যেন আচ্ছন্ন করে ফেলে, নিকটবর্তী হতে থাকে, আর তার ঘোড়াটি লাফালাফি করছিল। সকালে তিনি এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বল্লেন: “তা ছিল প্রশান্তি যা কুরাআন পাঠ করার ফলে অবতীর্ণ হচ্ছিল। (বুখারী) (সহীহ বুখারী, কুরআনের ফযিলত অধ্যায়, সূরা কাহাফের ফযিল পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৫০১১, ৯/৫৭)।


৩। জুমার দিন পাঠকারীর জন্য আগামী জুমা পর্যন্ত জ্যোতির্ময় হয়:

হতে বর্ণিত, তিনি নবী

আবু সাঈদ খুদরী(রাদিআল্লা) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সাঃ) হতে বর্ণনায় বলেন: যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে, উভয় জুমার মধ্যবর্তী তার জন্য নূর আলোকিত হবে। (বায়হাকী) ( সুনানে আকবার, জুমাআর বিধান অধ্যায়, জুমআর রাতে ও দিনে রাসূল (সাঃ) এর উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা ও সূরা কাহাফ ও অন্যান্য সূরা প করার নির্দেশ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৫৯৯৬, ৩/৩৫২। শায়খ আলবা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন । (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ১/৪৫৫।)


(চ) সূরা মুলকের উপকারিতা:

১। সূরা মুলক পাঠকারীর জন্য শুপারিসকারী:

আবু হুরাইরা (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, 

তিনি বলেন: কুরআনে একটি সূরা আছে, যাতে রয়েছে ঊনত্রিশটি আয়াত। যা পাঠকারীকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সুপারিশ করতেই থাকবে । আর তা হলো: সূরা মুলক

( জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত কুরআনের ফযিলত, সূরা মুলকের ফযিলত ও পাঠ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০৫৩, ৮/১৬১-১৬২। ইমাম তিরমিজী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ৮/১৬২; এবং সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/৬।)


(খ) ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাদিআল্লা) বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা মুলক পাঠ করবে, তার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দিবেন। 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এ সূরাকে আমরা (জাহান্নাম হতে বাধা দানকারী) সূরা হিসেবে অভিহিত করতাম। আর সেটা হলো কুরআনে এমন একটি সূরা, যে ব্যক্তি এটিকে প্রত্যেক রাতে পাঠ করবে, সে বেশী করল ও উত্তম করল । (সংক্ষিপ্ত) 

( সুনানে কুবরা, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, সূরা মুলক পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১০৪৭৯, ৯/২৬২-২৬৩; শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/১৯৩।)


২। সূরা মুলক পাঠের ক্ষেত্রে নবী(সাঃ) এর গুরুত্ব প্রদানঃ

জাবের (রাদিআল্লা) বলেন: নিশ্চয় নবী (সাঃ) সূরা সেজদা ও সূরা মুলক পাঠ

না করে ঘুমাতেন না। (তিরমিজী) (জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত কুরআনের ফযিলত, সূরা মুলকে ফযিলত ও পাঠের অধ্যায়, হাদীস নং ৩০৫৪, ৮/১৬২; শায়খ আলবা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/৬।)

 

(ছ) সূরা কাফেরুনের উপকারিতা:

(১) সূরা কাফেরুন শিরক হতে সম্পর্কহীনতাঃ

ফারওয়া বিন নাওফাল (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সাঃ) এর নিকট এসে আরজ করলেন, 

হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যা আমি ঘুমানোর সময় পাঠ করব। 

তিনি বলেন: তুমি সূরা কাফেরুন পাঠ করো, কেননা এটা হলো: শিরক থেকে সম্পর্কহীনতা । ( জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত দাওয়াত অধ্যায়, হাদীস ৩৬২৭, ৯/২৪৬। এ হাদীস সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার বলেন: সুনান সংকলক, ইবনে হিব্বান ও হাকেম হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন । (দেখুন: ফাতহুল বারী ১১/১২৫); শায়খ আল হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৪৫); অ দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ৩/৯৫৪)।


২। সূরা কাফেরুন কুরআনের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য: 

ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: “আর সূরা কাফেরুন কুরআনের এক চতুর্থাংশ (সমতুল্য) । ( জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত, কুরআনের ফযিলত, সূরা যিলযাল পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, ৩০৫৭, ৮১৬৩-১৬৪ নং হাদীসের অংশ বিশেষ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/৬।)


(ছ) সূরা এখলাসের উপকারিতা:

১। সূরা কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য:

আবু দারদা (রাদিআল্লা) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: তোমাদের কেউ প্রত্যেক রাতে কি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে অপারগ?

সাহাবারা উত্তর দিলেন: প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়বে।? 

তিনি বলেন: সূরা “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করলে সম্পূর্ণ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য ( সহীহ মুসলিম, মুসাফির ও কসর নামাযের বিধান অধ্যায়, সূরা ইখলাস পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ২৫৯-(৮১১), ১/৫৫৬। ইমাম বুখারী আবু সাইদ খুদরী হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (দেখুন: সহীহ বুখারী, কুরআনে ফযিলত অধ্যায়, সূরা ইখলাসের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৫০১৫,৯/৫৯।)


২। যে ব্যক্তি এ সূরাটি পাঠ করতে ভালবাসে আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালবাসেন:

আয়েশা(রাদিআল্লা)  হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: নবী  (সাঃ) এক ব্যক্তিকে কোন এক অভিযানের দলপতি করে প্রেরণ করেন। সে দলপতি ইমামতি করার সময় কেরাত শেষে সূরা “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। তারা ফিরে এসে সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ  (সাঃ) কে অবহিত করলো। 

তিনি বল্লেন: তোমরা তাকে জিজ্ঞাসা করো, সে কেন এমন করেছে?

তারা তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি উত্তর দেন যে, সূরাটি আল্লাহ তায়ালার গুণাগুণ বর্ণিত হয়েছে বিধায় আমি তা পড়তে পছন্দ করি।

অতঃপর নবী কে বল্লেন: তোমরা তাকে সুসংবাদ দাও যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালাও তাকে ভালবাসেন। ( বুখারী ও মুসলিম, তাওহীদ অধ্যায়, নবী তার উম্মতকে তাওহীদের দিকে আহ্বান সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৭৩৭৫, ১৩/৩৪৭-৩৪৮; আর হাদীসের মূল শব্দ তার। সহীহ মুসলিম, মুসাফির ও কসর নামাযে বিধান অধ্যায়, সূরা ইখলাস পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ২৬৩-(৮১৩), ১/৫৫৭)।


৩। এ সূরাকে ভালাবাসা জান্নাতে প্রবেশ করার কারণ:

আনাস হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: জনৈক ব্যক্তি বলল: আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমি এই “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” সূরাকে ভালবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বল্লেন: এ সূরার ভালবাসাই তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে ( মুসনাদে দারেমী, সুনানে দারেমী নামে প্রসিদ্ধ । কুরআনের ফযিলত অধ্যায়, সূরা ইখলাসের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৪৭৮, ৪/২১৬২। শায়খ হোসেন সেলিম হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: দারেমীর টীকা ৪/২১৬২।)


(জ) সূরা ফালাক ও নাস পাঠের উপকারীতা:

এ সূরাদ্বয়ের মত অন্য কোন সূরা দিয়ে এত বেশী প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়া হয় না:

উকবা বিন আমের (রাদিআল্লা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ  (সাঃ) এর সাথে চলছিলাম।

অত:পর তিনি বল্লেন: হে উকবা! তুমি বল:

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি বলব?

তিনি আমাকে কিছু না বলে চুপ থেকে পূণরায় বল্লেন: হে উকবা!

বল:

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি বলব?

তিনি আমাকে কিছু না বলে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। 

আমি বললাম: হে আল্লাহ! তুমি আমার দিকে তার মনোনিবেশ করে দাও।

অত:পর তিনি বল্লেন: হে উকবা! তুমি বলঃ

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি বলব?

তিনি বল্লেন: তুমি সূরা “কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক” পাঠ করো, আমি যখন সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলাম । 

আবার তিনি বল্লেন: হে উকবা বল:

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি বলব?

তিনি বলেন: তুমি সূরা “কুল আউযু বিরাব্বিন নাস” পাঠ করো । 

আমি যখন সূরা শেষ পর্যন্ত পড়লাম, তখন রাসূলুল্লাহ  (সাঃ) বল্লেন: এ সূরাদ্বয় দ্বারা যে পরিমাণ প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়া হয়েছে, অন্য কোন কিছু দ্বারা তা হয়নি। ( সুনানে নাসায়ী, নিরাপদ লাভের উপায় অধ্যায়, ৮/২৫৩-২৫৪। এ হাদীস সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন: হাসান সহীহ, (সহীহ সুনানে নাসায়ী ৩/১১০৭।)


(ঝ) সূরা ফালাক, নাস ও এখলাস পাঠের উপকারিতা:

সকাল-সন্ধ্যা সূরাগুলি পাঠ করলে সকল কিছুর জন্য যথেষ্ট হবে:

মুআজ বিন আব্দুল্লাহ বিন খুবাইব তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: এক বৃষ্টিময় অন্ধকার রাতে বের হয়ে আমরা রাসূলুল্লাহ  (সাঃ) এর অপেক্ষায় ছিলাম যে, তিনি আমাদের নামায পড়াবেন। 

বর্ণনাকারী বলেন: অতপর রাসূলুল্লাহ  (সাঃ) আমাদের নামায পড়ানোর উদ্দেশ্যে বের হলেন। অতপর আমাকে বললেন: ‘পাঠ কর’ আমি কিছুই বললাম না, অত:পর তিনি বলেন: ‘বল’ আমি বললাম: কি বলব? 

তিনি বললেন: সকালে ও সন্ধ্যায় সূরা এখলাস,

সূরা ফালাক ও নাস তিনবার করে পাঠ করবে, তবে তোমার সকল কিছুর জন্য যথেষ্ট হবে । (আবু দাউদ, তিরমিজী ও নাসায়ী) ( সুনানে আবু দাউদ, আদব অধ্যায়, সকালে কি পাঠ করতে হবে তার পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৫০৭২, ১৩/২৯০; এবং জামে তিরমিজী, দাওয়াত অধ্যায়ে এ সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। 

হাদীস নং ৩৮১০; ১০/২১; হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। সুনানে নাসায়ী, নিরাপদের উপায় অধ্যায়, ৮/১২৫০। ইবনে হাজার ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: নাতায়েজুল আফকার ২/২৩৮। আরো দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ্দ ৩/৯৫৮; ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৮২; ও সহীহ সুনানে নাসায়ী ৩/১১০৪।)


রাসূলুল্লাহ এর বাণী: তোমার সকল কিছুর জন্য যথেষ্ট হবে”: এর অর্থ হলো: সকল প্রকার অনিষ্ট তোমার হতে প্রতিহত করা হবে। অথবা যত দোয়া দ্বারা আশ্রয় চাওয়া হয়, (সেগুলি পাঠ না করে ও) এগুলি পাঠ করাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে।


(দেখুন: শরহে আত তায়বী, ৫/১৬৭১; ও আওনুল মাবুদ ১৩/২৯০)।


আমাদের এই ইউটুব চ্যেনেলে কুরআন সুন্নাত হাদীস,দৌনন্দিন জিকিরের ফজিলত বিষয়ে জানার জন্য চ্যনেলে {হে মুমিনগণ!}দেখুন।
সুনানে ইবনে মাজহা সহি হাদিস শুনুর জন্য ইউটুব চ্যনেস {হাদিস বিশ্বনবির বাণী}দেখুন।
সুনানে ইবনে মাজহা সবগো সহিহ হাদিস দেখুন।
আল-কোরআন ১১৪টি সুরা শুনার জন্য ইউটুব চ্যেনেল {ইসলামিক একাডেমি এনপি}দেখুন।

Post a Comment

0 Comments