Ticker

10/recent/ticker-posts/

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.., সুবাহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলার ফযীলত।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.., সুবাহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলার ফযীলত।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.., সুবাহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলার ফযীলত।


ক: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর ফযীলত:


১। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সর্বোত্তম জিকির।

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি: তিনি বলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” হলো সর্বোত্তম জিকির। 

জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত দাওয়াত অধ্যায়, মুসলিম ব্যক্তির দোয়া গ্রহণীয় পরিচ্ছেদ, ৩৬০৭, ৯/২২৯ নং হাদীসের অংশ বিশেষ, হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। আরো দেখুন: নাসায়ীর সুনানে কুবরা, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, সর্বোত্তম দোয়া ও জিকির পরিচ্ছেদ, ১০৫৯৯, ৯/৩৬০ নং হাদীসের অংশ বিশেষ । ইমাম তিরমিজী ও শায়শ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন । দেখুন: জামে তিরমিজী ৯/২২৯-২৩০ এবং সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৪০)। 


আল্লামা মুবারকপুরী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর ফযিলতের হিকমত সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: এটি হলো: তাওহীদের বাক্য, তার সমতুল্য আর কোনটিই হতে পারে না, এ বাক্যটিই হলো: ঈমান ও কুফুরের মাঝে পার্থক্যকারী, আর এটি বান্দার অন্তরে ও আল্লাহর মধ্যে সর্বোত্তম সমন্বয় এবং আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুকে সর্বাধিক পরিত্যাগকারী, এবং এটিই হলো: হৃদয় পরিশুদ্ধির সর্বোচ্চ উপায়, এবং ভিতর পরিস্কার ও অন্তরকে অপবিত্রতার  ভয়াবহতা হতে রক্ষাকারী এবং শয়তানকে বিতাড়িতকারী।” (দেখুন: তুহফাতুল আহওয়াজী ৯/২২৯।)  


২। যখন এখলাসের সাথে পাঠ করা হয় তখন তা আরশে পৌঁছে যায়:

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)  হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন: বান্দা যখনই এখলাসের সাথে ও কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়ে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করে, তখনই তার জন্য আকাশের দরজাগুলি খুলে যায় এমনকি তা আরশে গিয়ে পৌঁছে।

আল্লামা তায়বী বলেন: এর অর্থ হলো: এটি ও এর মত দোয়াগুলি অতি দ্রুত কবুল হয়, এবং এতে রয়েছে অধীক সওয়াব। (দেখুন: শরহে তায়বী ৬/১৮৩০।)


২ । জামে তিরমিজী, দাওয়াত অধ্যায়ে অন্যান্য হাদীস, হাদীস নং ৩৮২৪, ১০/৩৬। ইমাম তিরমিজী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত: টীকা, ১০/৩৬০, ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৮১।)


৩। একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.. বলার ফল

আবু আইয়াশ(রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি সকালে বলবে:

لا إله إلا الله.. وسبحان الله والحمد لله والله أكبر ولا حول ولا قوة إلا بالله.


অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল আধিপত্য তাঁর, তারই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান ।


তার আমলনামায় ইসমাইল এর বংশধরের একজন কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব লিপিদ্ধ করা হবে, ১০ নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে নিরাপদে থাকবে। আর যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে, তবে সকাল হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ পাবে। 


সুনানে আবু দাউদ, আদব অধ্যায়, সকালে কোন দোয়া পাঠ করবে পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৫০৬৭, ১৪/২৮৩-২৮৫; এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার, এবং দেখুন: সুনানে ইবনে মাজাহ, দোয়ার অধ্যায়, মুসলিম ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় কোন দোয়া পাঠ করবে তার পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৯১৩, ২/৩৪৯। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ৩/৯৫৭ এবং সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ ২/২২৩।)


৪ । একশত বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.. পাঠ করার ফযীলত

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি একশতবার বলবে:

لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قدير


অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল আধিপত্য তাঁর, তারই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান ।


তার আমল নামায় ১০জন কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে, ১০০ নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে ও ১০০ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তান হতে নিরাপদে। থাকবে। আর তার চেয়ে অধিক পাঠকারী ব্যতীত তার চেয়ে বেশী নেকীর অধিকারী কেউ হতে পারবে না।


বুখারী ও মুসলিম: সহীহ বুখারী, দাওয়াত অধ্যায়, তাহলীল অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠের ফযিলত, হাদীস নং ৬৪০৩, ১১/২০১; এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার ।


সহীহ মুসলিম, জিকির, দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়, তাহলীল, তাসবীহ ও দোয়াল ফযিলত পরিচ্ছেদ, ২৮- (২৬৯১), ৪/২০৭১ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।


৫। মৃত্যুর সময় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করার ফল: 


(ক) বিপদ মুক্ত হবে ও বর্ণ উজ্জল হবে ইমাম আহমাদ ত্বলহা বিন উবাইদুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন যে, উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে অত্যন্ত চিন্তিত ও মলিন দেখেন, সুতরাং তিনি বলেন: তোমার কি হয়েছে ওহে আবু মুহাম্মাদ! তোমাকে মলিন দেখছি। 

সম্ভবত তোমার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে? তিনি বলেন: না, তারপর আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর প্রশংসা করলেন: কিন্তু আমি নবী কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি তার মৃত্যুর সময় এমন এক কালেমা বলবে, যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তার বিপদ মুক্ত করবেন এবং তার বর্ণ উজ্জল করবেন। 


অন্য বর্ণনায় রয়েছে: আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ )কে বলতে শুনেছিঃ আমি অবশ্যই এমন এক কালেমা জানি, যে ব্যক্তি সেই কালেমাটি তার মৃত্যুর সময় বলবে, শরীর হতে বের হওয়ার তার আত্মা শান্তি পাবে এবং কালেমাটি তার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে। 

(আলমুসনাদ, হাদীসের এক অংশ ১, ১৮৭/২৩৬); তার সনদকে আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন। দেখুন: আল মুসনাদের টিকা; ১/২৩৬।


হে আল্লাহ! মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার সময় তুমি তা হতে আমাদেরকে বঞ্চিত করো না। আমীন।


(বর্ণনাকারী বলেন) তারপর আর আমি তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে সক্ষম হইনি, পরিশেষে তিনি মৃত্যুরবরণ করেন। অতঃপর উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: নিশ্চয়ই আমি সে সম্পর্কে জানি। তারপর ত্বলহা (বর্ণনাকারী) তাকে বলেন: তা আসলে কি? 

উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বলেন: নবী তাঁর চাচাকে যে কালেমার নির্দেশ দিয়েছিলেন: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” তার চেয়ে মহান কোন কালেমা কি জানা আছে?

পরিশেষে ত্বলহা বলে: আল্লাহর শপথ! তা আসলে ঐ কালেমাটিই।”


(খ) জান্নাতে প্রবেশ করা:

মুআজ বিন জাবাল হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্বে সর্ব শেষ বাণী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কালেমাটি পাঠ করা, এবং এর সাথে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ মিলিয়ে। (দেখুন: ফাতহুল বারী, ১/১০৪, ও উমদাতুল কারী ১/২৬০, ও আউনুল মাবূদ ৮/২৬৭।)


 হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুনানে আবু দাউদ, জানাজা অধ্যায়, মুমূর্ষ ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কালেমা শুনানো অধ্যায়, হাদীস নং ৩১১৪, ৮/২৬৭, এ হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন । (দেখুন: সহীহ সুনানে আবু দাউদ ২/৬০২।)


হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সর্ব শেষ কথা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” করো। হে চিরঞ্জীব সবার প্রতিপালক! কবুল করো।


খ। সুবহানাল্লাহ এর ফযীলত:

এক শতবার পাঠ করলে এক হাজার নেকী অর্জন, এক হাজার গুনাহ মাফ:

সাআদ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: একদা এর নিকট বসেছিলাম, এমতাবস্থায় তিনি বললেন: তোমাদের মাঝে কি কেউ প্রত্যেহ এক হাজার নেকী অর্জনে আমরা রাসূলুল্লাহ অক্ষম?

বৈঠকের মধ্য হতে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, আমাদের মাঝে কেউ কিভাবে প্রত্যেহ এক হাজার নেকী অর্জন করবে?

তিনি বলেন: একশত বার সুবহানাল্লাহ পাঠ করলে এক হাজার নেকী অর্জিত হবে অথবা এক হাজার গুনাহ মাফ হৰে (গ) আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করার ফযীলত; 

সহীহ মুসলিম, জিকির, দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়, তাহলীল, তাসবীহ ও দোয়ার ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৭- (২৬৯৮), ৪/২০৭৩। 


গ “আল-হামদুল লিল্লাহ” সর্বোত্তম দোয়া:

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “আলহামদু লিল্লাহ” হলো সর্বোত্তম প্রার্থনা । 

জামে তিরমিজী, রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণিত দাওয়াত অধ্যায়, মুসলিম ব্যক্তি দোয়া গ্রহণীয় পরিচ্ছেদ, ৩৬০৭, ৯/২২৯ নং হাদীসের অংশ বিশেষ, এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। 

আরো দেখুন; সুনানে কুবরা, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, সর্বোত্তম জিকির ও দোয়া পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১০৫৯৯, ৯/৩০৬। ইমাম তিরমিজী ও হাফেয ইবনে হাজার ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। 

(দেখুন: জামে তিরমিজী ৯/২২৯ -২৩০, নাতায়েজুল আফকার ১/৬২; ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৪০।)


২। কোন ব্যাপারে “আলহামদু লিল্লাহ” বললে তার চেয়ে উত্তম লাভ করা:

আনাস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্দাকে কোন প্রকার নেয়ামত দান করেন, তখন যদি সে নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ “আলহামদু 

লিল্লাহ” পাঠ করে, তবে যে নেয়ামত সে গ্রহণ করেছিল তার চেয়ে উত্তমটি দান করা হবে।

অন্য বর্ণনায় এসেছে: “তবে তাকে সে নেয়ামত হতে উত্তম নেয়ামত প্রদান করা হবে।” 

(দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব, জিকিরের পরিচ্ছেদ, তাসবীহ ও তাকবীর পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান পরিচ্ছেদ, ২/২৪৩।)

সুনানে ইবনে মাজাহ, আদাব অধ্যায়, প্রশংসাকারীদের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৮৫০, ২/৩৩৬। এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ ২/৩১৯।)


৩। আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করলে নেকীর পাল্লা ভরে যায়:

আবু মালেক আলআশআরী এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন: “আলহামদু লিল্লাহ” পাঠ করলে নেকীর পাল্লা পূর্ণ হয়ে যায়।

সহীহ মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়, অজুর ফযিলত পরিচ্ছেদ, ১- (২২৩), ১/২০৩ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।


(ঘ) “সুবহানাল্লাহ” ও “আলহামদু লিল্লাহ” এর ফযীলত

১। এদুটি হলো আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় বাক্য

আবু জার ৫ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেন: 

আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় বাক্যের সংবাদ দিব?

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় বাক্য সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন।

তিনি বলেন: আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় বাক্য হলো: “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী।”

সহীহ মুসলিম, জিকির দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়। সুবহানাল্লাহি ওয়া বি হামদিহী পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৮৫- (২৭৩১), ৪/২০৯৩-২০৯৪।


২। স্বর্ণের একটি পাহাড় আল্লাহর রাস্তায় দান করার চেয়েও তা আল্লাহর নিকট প্রিয়ঃ

আবু উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)  হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেন: যে ব্যক্তির জন্য রাত্রি কালিন এবাদত করা কঠিন, সম্পদ খরচ করতে কৃপণ, শত্রুর সাথে লড়ায়ে অপারগ, সে যেন বেশী বেশী “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” পাঠ করে। কেননা এগুলি হলো আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় স্বর্ণের পাহাড় দান করার চেয়েও তাঁর নিকট প্রিয় ।

 

তারগীব ও তারহীব, জিকির ও দোয়া অধ্যায়, বিভিন্ন ভাবে তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান অধ্যায়, হাদীস নং ৮, ২/৪২২। এ হাদীস সম্পর্কে হাফেয মুনজিরী বলেন: হাদীসটি ফারইয়াবী ও তাবারানী বর্ণনা করেছেন, আর হাদীসের মূল শব্দগুলি তাবারানীর, হাদীসটির সনদ গরীব, তবে ইনশাআল্লাহ সনদে দোষ নেই। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ২/৪৪২। এ হাদীস সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন: হাদীসটি সহীহ লি গায়রিহী। (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/২২৮।)


৩। তার দ্বারা আকাশমন্ডলী ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থান ভরে যায়: 

আবু মালেক আশআরী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন:


“সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহ” পাঠ করলে (সওয়াব দ্বারা) উভয়টি আকাশমন্ডলী ও যমিনের মধ্যবর্তী স্থান ভরে যায়। 


সহীহ মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়, অজুর ফযিলত পরিচ্ছেদ, ১-(২২৩), ১/২০৩ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।


৪। এর মাধ্যমে সৃষ্টিজীবকে রিজিক প্রদান করা হয়:

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন আল্লাহর নবী নূহ মৃত্যু মুখে পতিত হলেন, তখন তাঁর ছেলেকে বললেন: আমি তোমাকে অসীয়ত বর্ণনা করছি; দুটি বস্তুর নির্দেশ দিচ্ছি আর দুটি হতে বারণ করছি। (প্রথমত:) আমি তোমাকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করার নির্দেশ দেই, কেননা যদি সাত তবক আকাশ ও সাত তবক যমীন পাল্লার এক পার্শে রাখা হয় আর “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এক পার্শ্বে রাখা হয়, তবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর পাল্লা সেগুলির চেয়ে ঝুকে যাবে। আর যদি সাত তবক আকাশ ও সাত তবক যমীন এমব বৃত্তে পরিণত হয় যার প্রবেশ দার অজ্ঞাত, তবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” তা ভেঙ্গে দিবে।


এবং আমি তোমাকে “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” পাঠ করার নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা এগুলি হলো প্রত্যেক জিনিসের দোয়া, আর এর মাধ্যমেই সৃষ্টিজীবকে রিযিক দেয়া হয় ।

আর আমি তোমাকে শিরক ও অহঙ্কার হতে বারণ করছি ।


দেখুন: মুসনাদ, ৬৫৮৩, ১১/১৫০-১৫১ নং হাদীসের অংশ বিশেষ । হাফেয হায়সামী এ হাদীস সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন, এবং ইমাম তাবারানীও অনুরূপ বর্ণনা করেনছেন। ইমাম আহমাদের বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীরা বিশ্বস্ত। (দেখুন: মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২২৩। শায়খ আরনাউত ও তার সাথীরা এ হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: মুসনাদের টীকা ১১/১৫১।)


৫। যত বেশী গুনাহ হোক না কেন এগুলি একশতবার পাঠ করলে সব ক্ষমা হয়ে যায়:


আবু হুরাইরা এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেহ একশত বার “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” পাঠ করবে, তাঁর গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্যও হয় ।

বুখারী ও মুসলিম: সহীহ বুখারী, দাওয়াত অধ্যায়, তাসবীহ পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬৪০৫, ১১/২০৬ এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। সহীহ মুসলিম, জিকির দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়। তাহলীল, তাসবীহ ও দোয়ার ফযিলত পরিচ্ছেদ, ২৮(২৬৯১), ৪/২০৭১ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।


৬। “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী” পাঠকারীর জন্য জান্নাতে খেজুর বৃক্ষ রোপন করা হয়:

জাবের হতে বর্ণিত, তিনি নবী হতে বর্ণনা করেন, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী” পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর বৃক্ষ রোপন করা হবে।

 জামে জিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত দাওয়াত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬৯৬, ৯/৩০৫। ইমাম তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছনে। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা, ৯/৩০৫; ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৬১); এবং আরো দেখুন: নাতায়েজুল আফকার ১/৮৯।


৭। এমন পতিপয় তাসবীহ ও তাহমীদ যা সারা দিবা-রাত্রী জিকির অপেক্ষা উত্তম:

আবু উমামা আল-বাহেলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: রাসূলুল্লাহ(সাঃ) একবার তার নিকট দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছিলেন যে সময় তার ঠোট দুটি নড়ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবু উমামা! তুমি কি বলছ?

তিনি বলেন, আমি কি তোমাকে দিবা-রাত্রীর সর্বক্ষণ জিকির করার চেয়ে অধিক ও উত্তম জিকির শিক্ষা দিব না? তুমি বলবে:


سُبْحَانَ الله عَدَدَ ما خَلَقَ، وسُبْحَانَ اللهِ مِلْءَ مَا خَلَقَ، سُبْحَانَ الله عَدَدَ مَا فِي فِي الأَرْضِ وَالسَّمَاءِ، وسُبْحَانَ الله الأَرْضِ وَالسَّمَاءِ، وسُبْحَانَ الله ملء ما عَدَدَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ، وَسُبْحَانَ اللهِ مِلْءَ كُلِّ كُلَّ ، وَسُبْحَانَ الله ملء و تقول : الْحَمْدُ لله مِثْلَ ذَلكَ».شَيْءٍ عَدَدَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ، وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ، وَسُبْحَانَ اللهِ مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ وَتقول : الْحَمْدُ لله مثلَ ذَلكَ».


অর্থাৎ আমি আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির পরিমাণ তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, এবং আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা ভর্তি । আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সে পরিমাণ, আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি জমিনে ও আকাশে যত সৃষ্টিজীব রয়েছে সে পরিমাণ। আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই পরিমাণ যা তার কিতাব হিসাব করেছে। আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল বস্তু ভর্তি আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি প্রত্যেক বস্তু পরিমাণ । অনুরূপভাবে “আলহামদু লিল্লাহ” ও বলবে। 


সুনানুল কুবরা, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, হাদীস নং ৯৯২১, ৯/৭৩। আল ইহসান ফি তাকরীব সহীহ ইবনে হিব্বান, কিতাবুর রাকায়েক, জিকির অধ্যায়, যে তাসবীব পাঠ দিন রাত ২৪ ঘন্টা জিকির করার চেয়ে উত্তম, হাদীস নং ৮৩০, ৩/১১১-১১২। হাফেয ইবনে হাজার হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: নাতায়েজুল আফকার ১/৭৬); শায়খ শুআইব আলআরনাউত হাদীসের সনদকে হাসান বলেছেন । (দেখুন: আল ইহসানের টীকা ৩/১১২।)


(ঙ) “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম” এর ফযীলত:

আবু হুরাইরা(রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: দুটি বাক্য বলতে সহজ, আল্লাহ তায়ালার

নিকট প্রিয় বাক্য, কিয়ামতের দিন মিযানে অনেক ভারী। আর তাহলো:

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ الله العظيم


অর্থ: আমি আল্লাহর সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করছি, মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

বুখারী ও মুসলিম: সহীহ বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়, আল্লাহ তায়ালার বাণী: “এবং আমরা কিয়ামত দিবসে ইনসাফের পাল্লা রাখব।” অধ্যায়, হাদীস নং ৭৫৬৩, ১৩/৫৩৭; এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। এবং সহীহ মুসলিম, জিকির দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়, তাহলীল, তাসবীহ ও দোয়া অধ্যায়, হাদীস নং ৩১-(২৬৯৪), ৪/২০৭২।


(চ) তাসবীহ, তাহলীল ও তাহমীদের ফযিলত;

এগুলি আরশের পার্শ্বে অবস্থান করে ও পাঠকারীকে স্মরণ করাই: নু'মান বিন বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: তোমরা আল্লাহর মহত্ব সূচক “সুবহানাল্লাহ”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও “আলহামদু লিল্লাহ” এর যে সব জিকির কর, সেগুলি আরশের পার্শ্বে অবস্থান করে এমতাবস্থায় তার মৌমাছির গুনগুনানির মত আওয়াজ হয় এবং তারা তাদের পাঠকারীর স্মরণ করাই ।


তোমাদের মাঝে কি কেউ এটা চায় না যে, সর্বদায় তার ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিবে এমন হোক।

সুনানে ইবনে মাজাহ, আদব অধ্যায়, তাসবীহ পাঠের ফযিলত; পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৮৫৪, ২/৩৩৭। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

(দেখুন: সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ ২/৩২০; ও সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/৩২০।)


(ছ) তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠের ফযিলত:

আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” একশত বার পাঠ করবে, তার আমল নামায় একশত উট সাদকার মত সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। আর যে ব্যক্তি “আলহামদু লিল্লাহ” একশত বার পাঠ করবে, তার আমল নামায় একশত মূল্যবান প্রস্তত ঘোড়া পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। আর যে ব্যক্তি একশত বার “আল্লাহু আকবার” পাঠ করবে, মক্কায় একশত উট কুরবানী করার পরিমাণ সওয়াব হবে। 


মুজাম্মাআ আযযায়েদাহ হতে সংগৃহীত, আজকার অধ্যায়, বাকীয়াতুস সালেহাত ও অনুরূপ জিকিরের পরিচ্ছেদ, ১০/৯১-৯২। এ হাদীস সম্পর্কে হাফেয হায়সাম বলেন: হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং হাসান বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা, ১০/৯২।)


(জ) “সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার” পাঠ করার ফযিলত:

১। এগুলি আল্লাহ তায়ালার নিকট অতি প্রিয় বাক্যঃ


সামুরাহ বিন জুন্দুব এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আল্লাহর নিকট চারটি বাক্য অনেক প্রিয় । তা হতে যে কোন একটি থেকে আরম্ভ করাতে কোন দোষ নেই:


سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ للهِ ، وَلاَ إِلَهَ إلا الله ، وَاللهُ أَكْبَرُ.


অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ব্যতীত “ কোন সত্য উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান ।

সহীহ মুসলিম, আদব অধ্যায়, খারাপ নামে নামকরণ করা দুষণীয় পরিচ্ছেদ, ১২-(২১৩৭), ৩/১৬৮৫ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।


২। যত কিছুর উপর সূর্য উদয় হয় রাসূল এর নিকট তার চেয়ে প্রিয় বাক্য:

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: এ বাক্যগুলি পাঠ করা যেন আমার নিকট যত কিছুর উপর সূর্য উদয় হয় তার মধ্যে সর্বাধিক প্রিয়


سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلهِ ، وَلاَ إِلَهَ إلا الله ، وَاللهُ أَكْبَرُ .

অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই আল্লাহ মহান ।


সহীহ মুসলিম, জিকির দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়, তাহলীল, তাসবীহ ও দোয়ার ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩২-(২৬৯৫), ৪/২০৭৬।


৩। এগুলি পাঠ করলে তার জন্য জান্নাতে খেজুর বৃক্ষ রোপন করা হয়:

ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন: আমি মেরাজের রাত্রিতে ইব্রাহীম এর সাথে সাক্ষাত কালে তিনি বলেন: হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মতকে আমার পক্ষ হতে সালাম জানিয়ে দিয়ে বল, যে জান্নাতের মাটি পবিত্র ও পানি হলো মিষ্ট, তবে তা হলো বৃক্ষহীন সমতল ময়দান। আর "সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবার” পাঠ করাই হলো তাতে বৃক্ষ রোপন করা। 


জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত দাওয়াত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬৯৩, ৯/৩০২-৩০৩, এবং ইমাম তিরমিজী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ৯/৩০৩; ও সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৬০।)


 ৪। এগুলি জাহান্নাম হতে বাঁচার জন্য ঢাল স্বরূপ:

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেন:

তোমরা আমার নিকট হতে ঢাল গ্রহণ করো।

সাহাবারা জিজ্ঞাসা করল: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি উপস্থিত শত্রুর মুকাবিলায় ঢাল গ্রহণ করব?

তিনি বলেন: তোমরা জাহান্নাম হতে রক্ষার জন্য ঢাল। আর তাহলো:


سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لله ، وَلاَ إلَهَ إلا الله ، والله أكبر.


অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান ।

কেননা এগুলি কিয়ামত দিবসে পরিত্রাণের অসীলা, ও অগ্রে আসবে। আর এগুলিই হলো: বাকীয়াতুস সালিহাত ।


নাসায়ীর সুনানে কুবরা, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, হাদীস নং ১০৬১৭, ৯/৩১৩, এবং দেখুন: মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, দোয়ার অধ্যায়, ১/৫৪১; এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। ইমাম হাকেম এ হাদীস সম্পর্কে বলেন: এঅন্য বর্ণনায় এসেছে: কেননা এগুলি কিয়ামত দিবসে নাজাতের অসীলা হয়ে সামনে সামনে ও পিছে পিছে থাকবে। আর এগুলি হলো: বাকীয়াতুস সালিহাত ।


নাসায়ীর সুনানে কুবরা ১/৩১৩, হাফেয মুনজিরী হাদীসটিকে তারগীব ও তারহীবে বর্ণনা করেছেন। আর শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/২৩৯।)


৫। এগুলির প্রত্যেকটি সাদকাহ স্বরূপ:

আবু জার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: সাহাবীদের মধ্য হতে কিছু লোক নবী এর নিকট এসে নবী কে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! সম্পদশালীরা সমস্ত নেকী নিয়ে গেল। আমরা নামায আদায় করি, তারাও নামায আদায় করে, আমরা রো রাখি, তারাও রোযা রাখে। উপরন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পন্ন হতে দান-খয়রাত করে থাকে, (আমরা তো তা পারি না।)


তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা কি তোমাদের জন্য সাদকার ব্যবস্থ করে দেননি?

জেনে রেখো: নিশ্চয়ই প্রত্যেক তাসবীহ “সুবহানাল্লাহ” পাঠ কর হলো সাদকা ।

হাদীসটি সহীহ মুসলিমের শর্তে বর্ণনা করেছেন। 

(দেখুন: উল্লেখিত টীক ১/৫৪১, এবং ইমাম জাহাবী তার কথাকে সমর্থন করেছেন। (দেখুন _আততালখীস ১/৫৪১, এবং হাফেয মুনজিরী হাদীসটিকে তারগীব ও তারহীরে বর্ণনা করেছেন। আর শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/২৩৯।


প্রত্যেক তাকবীর “আল্লাহু আকবার” পাঠ করা হলো: সাদকা । প্রত্যেক তাহমীদ “আলহামদু লিল্লাহ” পাঠ করা হলো: সাদকা। এবং প্রত্যেক তাহলীল পাঠ করাও হলো: সাদকা। 

সহীহ মুসলিম, জাকাত অধ্যায়, প্রতিটি ভাল কাজই সাদকার অন্তর্ভুক্ত পরিচ্ছেদ, ৫৩-(১০০৬), ২/৬৯৭ নং হাদীসের অংশ বিশেষ ।


আল্লামা কুরতুবী বলেন: এ হাদীসের তাৎপর্য হলো: “প্রতিটি ভাল কাজ যাতে নিয়ত শুদ্ধি করা হয় তার প্রতিটিতেই সাদকার সওয়াব পাওয়া যায়, বিশেষ করে যারা সাদকা করতে অপারগ তাদের বেলায়ই বেশী প্রযোজ্য।” (দেখুন: আলমুফহাম: ৩/৫১।)


৬। এগুলির প্রতিটি একশত বার পাঠ করার ফযিলত;

উম্মু হানী বিনতে আবু তালেব হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছিলেন, অত:পর আমি বললাম: আমি তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি ও দুর্বল হয়ে পড়েছি। অতএব আপনি আমাকে এমন কিছু আমল শিক্ষা দিন যা আমি বসে বসে করতে পারি তিনি বললেন: তুমি একশত বার তাসবীহ “সুবহানাল্লাহ” পাঠ করো, যার ফলে তুমি ইসমাঈল এর বংশধর হতে একশত কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে ।


আর একশত বার আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করবে, যার ফলে আল্লাহর রাস্তায় মোটা তাজা একশত ঘোড়া রসদসহ সাজিয়ে দেয়ার সওয়াব পাবে ।


আর একশত বার আাহু আকবার পাঠ করবে, যার ফলে একশত ঘন্টা বাধা মাকবুল উটের পরিমাণ দান করার কবুল সওয়াব পাবে।

আর এশশতবার বলবে।

لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء

"অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল আধিপত্য তাঁর, তারই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।” যার ফলে -ইবনে খালফ বলেন: আমি মনে করি, যে তিনি বলেছেন:- আকাশ ও যমিনের মধ্যবর্তী স্থান ভরে যাবে, আর তোমার মত আমলকারী ব্যতীত উপরের দিকে তোমার মত অধিক আমল আর কারো উঠবে না মুসনাদ, হাদীস নং ২৬৯১১, ৪৪/৪৭১-৪৮০। 

হাফেয মুনজিরী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: তারগীব ও তারহীব ২/৪২৬।) এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/২৩৩, সহীহ হাদীস সিরিজ ৩/৩০২-৩০৪।)


(ঝ) “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠের ফযিলত:

১। এটি হলো জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি আবু মুসা আশআরী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: আমি কি তোমাকে এমন কালেমা 


শিক্ষা দিব না, যা হলো জান্নাতের ভাণ্ডার অথবা তিনি বলেন: তা হলো জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি ভাণ্ডার?

আমি বললাম: হ্যাঁ,বলুন ।

তিনি বলেন: তা হলো: “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ”। 

সহীহ মুসলিম, জিকির দোয়া, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়, নিম্ন স্বরে জিকির পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৪৭-(২৭০৪), ৪/২০২৮।


২। এটি জান্নাতের দরজাসমূহের একটি দরজা:

কায়স বিন সাআদ বিন উবাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তার পিতা তাকে নবী এর খেদমত করার জন্য দেন।

তিনি বলেন: আমার নিকট দিয়ে নবী অতিবাহিত হচ্ছিলেন, আর আমি সবে মাত্র নামায শেষ করেছি। তিনি তাঁর পা দিয়ে আমাকে খোচা মেরে বললেন: আমি কি তোমাকে জান্নাতের দরজাসমূহের একটি দরজা সম্পর্কে অবহিত করব না?

আমি বললাম: হা, অবহিত করুন।

তিনি বলেন: সেটা হলো: “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ ।”

জামে তিরমিজী, দাওয়াত পরিচ্ছেদ বিভিন্ন হাদীস অধ্যায়, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৮১৬, ১০/৩০০ ।


৩। এটি হলো: জান্নাতের বৃক্ষ রোপন আবু আইয়ূব আলআনসারী - বর্ণনায় বলেন: নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি তার মেরাজের রাতে ইব্রাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

এর নিকট দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার সময়, তিনি বলেন: হে জিব্রাঈল! আপনার সাথে কে?

তিনি বলেন: ইনি হলেন: মুহাম্মাদ অত:পর ইব্রাহীম ।

বললেন: আপনি আপনার উম্মতকে বেশী করে জান্নাতে বৃক্ষ রোপন করতে বলেন। কেননা সেটা হলো পবিত্র মাটি ও তার জমি হলো অনেক প্রশস্ত ।

তিনি বলেন: জান্নাতের বৃক্ষ রোপন কি ভাবে করবে ।

তিনি বলেন: তা হলো “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করা। 


মুসনাদ, হাদীস নং ২৩৫৫২, ৩৮/৫৩৩ এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার আরো দেখুন: আল ইহসান ফি তাকরীরে সহীহ ইবনে হিব্বান, কিতাবুর রাকায়েক, জিকির অধ্যায়, যে ব্যক্তি বেশী বেশী এ জিকির করবে, জান্নাতে তত বেশী তার জন্য বৃক্ষ রোপন করা হবে পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৮২১, ৩/১০৩। হাফেয মুনজিরী আহমদে বর্ণিত হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: তারগীব ও তারহীব ২/৪৪৫); এবং হাফেয ইবনে হাজার হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: নাতায়েজুল আফকার ১/৮৮); এবং এ হাদীস সম্পর্কে শায়খ ইমাম তিরমিজী এ হাদীস সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি এ কারণে “হাসান সহীহ গরীব” । (দেখুন: উল্লেখিত টীকা ১০/৩০) এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন । (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী ৩/১৮৩।)


(ঞ) তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, ও হাউকালা।

(১) পাঠের ফযিলতঃ

আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তারা নবী বলেছেন এ মর্মে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন যে, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি বলবে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার । 

অর্থাৎ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই, এবং আল্লাহ মহান।” 

সে তার রবকে সত্য বিশ্বাস করল তারপর তিনি বলেন: আমি ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই, আমি মহান ।

যখন বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু। 

অর্থাৎ: একক আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই।” তিনি বলেন: তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমি ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই, আমি একক ।


যখন বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা শারীকা লাহু।” অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই।” তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমি ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই, আমি একক, আমার কোন শরীক নেই ।


আর যখন বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু । অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই, তাঁর একচ্ছত্র মালিকানা, আর সকল প্রশংসা তাঁরই।”

আলবানী বলেন: হাদীসটি “সহীহ লি গায়রিহী” (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/২৫০।)


১। অর্থাৎ “লা হাইলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”

তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমি ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই, আমারই একচ্ছত্র মালিকানা, আর আমারই সকল প্রকার প্রশংসা । আর যখন বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ । অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই, এবং অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎ কাজ সামাধা করার কারো ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।”


তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমি ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই, আর আমি ব্যতীত অসৎ কাজ থেকে বেচে থাকার এবং সৎ কাজ সমাধা করার কোন শক্তি নেই ।

অত:পর নবী বলেন: যে ব্যক্তি রোগের সময় এ দোয়াটি পাঠ করবে এবং সেই রোগেই মারা যাবে, সে জাহান্নামের স্বাদ গ্রহণ করবে না। 


জামে তিরমিজী, রাসূল হতে বর্ণিত দাওয়াত অধ্যায়, রুগী ব্যক্তি কোন দোয়া পাঠ করবে তার দোয়া, হাদীস নং ৩৬৫৪, ৯/২৭৪; এবং হাদীসের মূল শব্দগুলি তার। আরো দেখুন: সুনানে ইবনে মাজাহ, আদব অধ্যায়, লা ইলাহা ইল্লাহ পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৮৩৯, ২/৩৩২, শায়খ আলবানী এ হাদীস সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি সহীহ। (দেখুন: সহীহ সুনানে তিরমিজী। _৩/১৫৩; এবং সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ ২/৩১৮; এবং সহীহ হাদীস সিরিজ ৩/৩৭৯।)

Post a Comment

0 Comments