ক) নামাযের সানা বা প্রারম্ভিক জিকিরসমূহ:
১। এমন দোয়া যা পৌঁছানোর জন্য ১২ জন ফেরেস্তা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়:
আনাস হতে বর্ণিত: এক ব্যক্তি অতি দ্রুত এসে কাতারে প্রবেশ করল, আর তার স্বাস স্পন্দিত হচ্ছিল। অতঃপর সে বলল:
اَلْحَمْدُ ِلله حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فيه
অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যা সর্বাধিক, সর্বোত্তম প্রশংসা এবং যার মধ্যে রয়েছে বরকত।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামায শেষ করেন, তখন বলেন: তোমাদের মাঝে কে এ বাক্যগুলি পাঠ করেছে?
সবাই চুপ থাকল ।
তিনি পূণরায় জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাদের মাঝে কে এ কথাগুলি পাঠ করেছে, সে তো আর খারাপ কিছু বলেনি।
অত:পর এক ব্যক্তি বলল: আমি দ্রুত গতিতে এসেছি বিধায় স্বাস স্পন্দিত হচ্ছিল । এমতাবস্থায় আমি এ দোয়াটি পাঠ করেছি।”
নবী(সাঃ) বলেন: আমি দেখলাম ১২জন ফেরেস্তা তা পৌঁছানোর প্রতিযোগিতা করছে যে, কে তা নিয়ে যাবে।
সহীহ মুসলিম, মসজিদ ও নামাযের স্থান বিষয়ক অধ্যায়, তাকবীরে তাহরীমা ও কেরাতের মাঝে কি পাঠ করা হবে তার পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১৪৯ (৬০০), ১/৪১৯-৪২০।
২। এমন কতিপয় কালেমা যা পাঠ করলে আকাশের দরজা তার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে:
ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁর বর্ণনায় বলেন: একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে নামায আদায় করছিলাম, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি বলে উঠল:
اللَّهُ أَكْبَرُ كَثِيراً ، وَالْحَمْدُ لله كثيراً، وَسُبْحَانَ الله بُكْرَةً وَأَصِيْلاً.
নামাযের পর রাসূলুল্লাহ বললেন: এমন এমন কালেমা কে বলল?
লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বলেছি।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন: আমি আশ্চর্য হয়েছি, এ কালেমাগুলির জন্য জান্নাতের দরজাগুলি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন: রাসূলুল্লাহ হতে শ্রবণ করার পর থেকে কোন দিন আমল করা বাদ দেইনি । দেখুন: উল্লেখিত টীকা, হাদীস নং ১৫০-(৬০১), ১/৪২০।
(খ) সূরা ফাতেহার ফযীলত
ফাতেহা পাঠকারী যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে:
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন: আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত,
তিনি নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি নামায পড়ল যাতে সূরা ফাতেহা পাঠ করল না, তার নামায গর্ভপাত হওয়া বাচ্চার ন্যায় । (কথাটি তিনবার বললেন।)
অত:পর হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা কে বলা হলো: আমরা তো ইমামের পিছনেও থাকি, (তখন কি করব?)
তিনি বলেন: তুমি তা মনে মনে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: নামাযকে এখানে নামায বলতে কি বুঝায়: ওলামারা বলেন: এখানে নামায বলতে সূরা ফাতেহাকে বুঝানো হয়েছে।
কেননা সূরা ফাতেহা ব্যতীত নামায শুদ্ধ হয় না বলে একে সালাত বা নামায বলে অভিহিত করা হয়েছে। (দেখুনঃ সহীহ মুসলিমের টীকা পৃ: ১/২৯৬।
আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি, এবং আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে ।
বান্দা যখন বলে:
الْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمينَ.
“সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালাক আল্লাহরই।”
আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল ।
“যিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।'
الرحمن الرحيم
আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমার বান্দা আমার গুণগান করছে। আর
যখন বলে:
“যিনি কর্মফল দিবসের মালিক।"
مَالك يَوْمِ الدِّينِ.
আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমার বান্দা আমার মহত্ব বর্ণনা করছে।
আবার বলেন: আমার বান্দা তাঁর সকল কিছু আমার উপর ন্যস্ত করল। অত:পর যখন বলে:
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
“আমরা তোমারই ইবাদত করি ও তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।'
আল্লাহ তায়ালা বলেন: এ হলো আমার ও আমার বান্দার মাঝে বিভক্ত, আর আমার বান্দা যা চাইবে সে তা পাবে। অতঃপর যখন বলে:
اهدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
“আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো, তাদের পথে যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো। তাদের পথে নয়, যারা ক্রোধে নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।'
আল্লাহ তায়ালা বলেন: এটা হলো আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে।
সহীহ মুসলিম, নামায অধ্যায়, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা পাঠ করা ওয়াজিব পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৩৮-(৩৯৫), ১/২৯৬।
(গ) আমীন বলার ফযীলত:
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে আমীন বলে তার গুনাহ মাফ হয়:
আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন পাঠকারী আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন
বল, কেননা সে সময় ফেরেস্তারাও আমীন বলে। যার আমীন বলা ফেরেস্তাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী) সহীহ বুখারী, দাওয়াত অধ্যায়, আমীন পাঠ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬৪০২, ১১/২০০।
অন্য বর্ণনায় এসেছে: যখন ইমাম
(غَيْرِ الْمَغضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ)
বলে তখন তোমরাও আমীন বল, কেননা যার আমীন বলা ফেরেস্ত তাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে । সহীহ বুখারী, আযান অধ্যায়, সজোরে আমীন পাঠ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৭৮২, ২/২৬৬।
(ঘ) রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরে জিকির ও তার ফযীলত:
১। “আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ” পাঠকারী ক্ষমা প্রাপ্ত: ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন: আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: যখন ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে, তখন তোমরা “আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ” বল । কেননা যার এ দোয়া পাঠ করা ফেরেস্ত ার বলার সাথে মিলে যাবে, তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে ।
দেখুন: উল্লেখিত টীকা, আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ” পাঠের ফযিলত অধ্যায়, হাদীস নং ৭৯৬, ২/২৮৩।
২। “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ” লেখার জন্য ফেরেস্তাদের প্রতিযোগিতা:
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন: রিফাআ বিন রাফে' আররুজকী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)
হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন: আমরা নবী (সাঃ) এর সাথে নামায পড়ছিলাম । তিনি যখন রুকু হতে মাথা উঠালেন, তখন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বললেন:
এরপর পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলল: “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাসীরান তায়্যিাবান মুবারাকান ফীহি” ।
নামায শেষে তিনি বললেন: এ দোয়াটি কে বলেছে?
সে বলল: আমি ।
তিনি বললেন: আমি দেখছি প্রায় ত্রিশজন ফেরেস্তা এটি লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করছে যে, কে আগে লিখবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৯, ২/২৮৪।
অন্য বর্ণনায় এসেছে: কে আগে নিয়ে উপরে যাবে। দেখুন: ফাতহুল বারী ২/২৮৬।
(ঙ) নামাযের পর পঠিত জিকিরসমূহের ফযীলত:
১। যে দোয়া ফজর ও মাগরিবে পাঠ করলে জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়া যায়:
মুসলিম বিন হারেস আত-তামীমী(রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাকে চুপে চুপে বলেন:
তুমি যখন মাগরিবের নামায শেষ করে ফিরবে, তখন তুমি: “আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নার” । (হে আল্লাহ তুমি আমাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দাও) সাতবার বলবে। কেননা তুমি যদি তা বল আর সে রাতেই মারা যাও, তবে তুমি তা হতে নিরাপত্তা লাভ করবে ।
অনুরূপ তুমি যখন ফজরের নামায আদায় করবে, তখনও পাঠ করবে। তুমি যদি সে দিনের ভিতর মারা যাও, তবে তুমি জাহান্নাম হতে নিরাপত্তা লাভ করবে ।
সুনানে আবু দাউদ, আদব অধ্যায়, সকালে কি পাঠ করা হবে পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৫০৬৯, ১৩/২৮৭-২৮৮।
হাফেয ইবনে হাজার ও শায়খ আব্দুল কাদের আরনাউত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (দেখুন: নাতায়েজুল আফকার ২/২২৫; ও আজকারে এর টাকা পৃঃ ১১৫।
২। ফজর ও মাগরিব নামাযের পর দশ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু..... পাঠ করার ফযীলত:
আবু আইয়্যুব (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি সকালে দশ বার বলবে:
لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল আধিপত্য তাঁর, তারই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান ।
তার আমলমানায় তার দ্বারা ১০ নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে, আর চারটি কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে। আর সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে নিরাপদে থাকবে। আর যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাযের পর পাঠ করবে, সেও সকাল হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ পাবে।
আল ইহসান ফি তাকরীবে সহীহ ইবনে হিব্বান, নামায অধ্যায়, দোয়া কুনাত পাঠের ফযিলত পরিচ্ছেদ, যে দোয়া ফজর ও মাগরিবের পর পাঠে চার জন দাস মুক্ত করার সওয়াব ও শয়তান হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়, হাদীস নং ২০২৩, ৫/৩৬৯।
হাফেয মুনজিরি এ হাদীসকে তারগীব ও তারহীবে উল্লেখ করে বলেন: ইমাম আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনে হিব্বান তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর মূল শব্দগুলি তার। (দেখুন: তারগীব ও তারহীব ১/৩০৫; আর শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
(দেখুন: তারগীব ও তারহীব ১/৩২২।) ইমাম ইবনে হিব্বানের অন্য বর্ণনায় এসেছে: এগুলি পাঠ করলে দশজন দাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে।
(দেখুন: আল ইহসান ফি তাকরীব সহীহ ইবনে হিব্বান, নামায অধ্যায়, দোয়া কুনুত পাঠ পরিচ্ছেদ, যে দোয়া পাঠে পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়, ৫/৩৭০।) আর এটা হয়তো পাঠকারীর অধিক এখলাসের উপর নির্ভর করেই । আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
৩। প্রত্যেক নামাযান্তে সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু.... পাঠ করার ফযীলতঃ
(ক) ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযান্তে সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, এ হলো ৯৯ বার আর শতবার পুরণের জন্য বলবে:
لا إله إلا الله، وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، وهو على كل شيء قدير.
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল আধিপত্য তাঁর, তারই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান ।
তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তার পরিমাণ সাগরের ফেনা সমতুল্য হয় ।
সহীহ মুসলিম, মসজিদ ও তার স্থানের বিবরণ অধ্যায়, নামাযান্তে জিকির ও তার বিবরণ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১৪৬- (৫৯৭), ১/৪১৮।
(খ) আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, মুহাজিরদের অভাবী ব্যক্তিরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট এসে, বলল:
হে আল্লাহর রাসূল! সম্পদশালীরা উচ্চ মর্যদা ও জান্নাতের স্থায়ী সুখ নিয়ে গেল ।
তিনি বললেন: তা কিভাবে?
তারা বললেন: আমরা নামায আদায় করি, তারাও নামায আদায় করে। আমরা রোযা রাখি, তারাও রোযা রাখে। উপরন্তু তারা দান- খয়রাত করে, আমরা তা পারি না। তারা কৃতদাস মুক্ত করে আমরা তা পারি না ।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ বললেন: আমি তোমাদেরকে কি এমন কিছু শিক্ষা দিব না? যা আমল করলে তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে পেয়ে যাবে এবং পরবর্তীদের অগ্রগামি থাকবে । আর তোমাদের মত যারা আমল করবে তারা ব্যতীত কেউ তোমাদের মত সওয়াব অর্জন করতে পারবে না ।
তারা উত্তর দিল, হে আল্লাহর রাসূল!(সাঃ) হাঁ, আমরা তা চাই ।
তিনি বলেন: তোমরা প্রত্যেক নামাযান্তে ৩ ৩ বার সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, ও আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।
বুখারী ও মুসলিম: বুখারী, আযান অধ্যায়, নামাযান্তে জিকির পরিচ্ছেদ, ৮৪৩, ২/৩২৫ নং হাদীসের অংশ বিশেষ। সহীহ মুসলিম, মসজিদ ও তার স্থানের বিবরণ, ১৪৭ -(৫৯৫) ১/৪১৬-৪১৭ নং হাদীসের অংশ বিশেষ। আর হাদীসের মূল শব্দগুলি তার ।
(গ) কাআব বিন উজরাহ হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি তার বর্ণনায় বলেন:
প্রত্যেক ফরজ নামাযান্তে তাসবীহসমূহ পাঠকারী কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর তাহলো: ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার
সহীহ মুসলিম, মসজিদ ও নামাযের স্থানের বিবরণ, নামাযান্তে জিকির ও তার বিবরণ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১৪৪- (৫৯৬) ১/৪১৮।
উপরোল্লেখিত তিনটি হাদীস ও এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিমে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসগুলি সম্পর্কে ইমাম নববী বলেন: এসবগুলিই নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী কর্তৃক বিভিন্নভাবে বর্ণিত, অতএব, সবগুলি গ্রহণ করা উচিৎ। সুতরাং সবার উচিত যে, সে যেন গুরুত্বের সাথে প্রত্যেক ফরজ নামাযান্তে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, এবং যেন সমস্ত বর্ণনার সমন্বয় হয় সে জন্যে সেগুলি সাথে বলে:
لا إله إلا الله، وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، وهو على كل شيء قدير.
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল আধিপত্য তাঁর, তারই সকল প্রশংসা তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।
শহরে নববী ৫/৯৪ ।
(ঙ) যার মাধ্যমে নামাযে ও অন্য সময় কুমন্ত্রণা হতে রক্ষা পাওয়া যায়:
১। উসমান বিন আবুল আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামায ও কেরাতের মাঝে বাধা হয়ে আমাকে ভুলের মাঝে ফেলে দেয়।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ বলেন: এটা তো খিনজিব নামক শয়তান এরকম করে থাকে। তুমি যখন এরকম অনুভব করবে, তখন তার কুমন্ত্রণা হতে বাচার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট শয়তান হতে পরিত্রাণ চাইবে ও তোমার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে । তিনি বলেন: আমি এরকমই করলাম, যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার নিকট হতে দূর করে দেন।
সহীহ মুসলিম, সালাম অধ্যায়, নামাযে শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬/- (২০৩) ৪/১৭২৮-১৭২৯।
ইমাম নববী বলেন: এ হাদীস হতে এটাই প্রতীয়মান হলো যে, কুমন্ত্রণা আসলে আউযু বিল্লাহ পাঠ করে বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলা মুস্তাহাব । শরহে নববী ১৪/১৯০।
২। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, নিশ্চয়ই নবী (সাঃ) সে এরশাদ করেছেন: তোমাদের কারো নিকট শয়তান এসে বলবে:
তোমাকে কে সৃষ্টি করেছেন?
সে উত্তর দিবে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন ।
সে পূণরায় বলবে: তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?
কেউ যখন এরকম অনুভব করবে, সে যেন বলে: “আমানতু বিল্লাহে ওয়া রাসূলিহী।” অর্থাৎ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। কেননা এটা বললে, তার সে কুমন্ত্রণা চলে যাবে ।
মুসনাদ, হাদীস নং ২৬২০৩, ৪৩/২৭১। হাফেয মুনযিরী এ হাদীস সম্পর্কে। বলেন: হাদীসটি ইমাম আহমাদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন, এবং আবু ইয়ালা ও বাজ্জারও বর্ণনা করেছেন।
(দেখুন: তারগীব ও তারহীব ২/৪৬১); শায়ক আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (দেখুন: সহীহ তারগীব ও তারহীব ২/২৬৮।)
0 Comments