Ticker

10/recent/ticker-posts/

আযান সম্পর্কিত জিকির ও তার ফযীলত

আযান সম্পর্কিত জিকির ও তার ফযীলত

 নবী তাঁর উম্মতের জন্য আযান সম্পর্কিত জিকির বর্ণনা করেছেন, এবং তাদেরকে তার ফযীলত সম্পর্কেও সংবাদ প্রদান করেছেন। নিম্নে ফযীলতসহ কতিপয় জিকির উল্লেখ করা হলো: 


১। মুয়াজ্জিনের মত যে ব্যক্তি আযানের বাক্যগুলি তার সাথে পাঠ করবে তার জন্য জান্নাত:

উমার বিন খাত্তাব এ হতে বর্ণিত, তিনি তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: যখন মুয়াজ্জিন বলেন: “আল্লাহু আকাবার, আল্লাহু আকবার।” তখন তোমাদের কেউ যদি আন্তরিকতার সাথে বলে: আল্লাহু আকবার, “আল্লাহু আকবার।”


অত:পর যখন মুয়াজ্জিন বলেন: “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” তখন সেও বলে: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তারপর মুয়াজ্জিন যখন বলেন: “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।” তখন সেও বলে: “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ ।”


যখন মুয়াজ্জিন বলে: “হায়্যা আলাস সালাহ।” তখন সে বলে: লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ । মুয়াজ্জিন যখ বলে: “হায়্যা আলাল ফালাহ।” তখন সে বলে: “লা হাউলা ওয়াল কুওয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ।”


মুয়াজ্জিন যখন বলে: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” তখন সেও বলে: “আল্লাহ আকবার, আল্লাহু আকবার।” অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” তখন সেও বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।” সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


সহীহ মুসলিম, নামায অধ্যায়, আযান শ্রবণ করে মুয়াজ্জিনের ন্যায় বলা

মুস্তাহাব পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১২-(৩৮৫), ১/২৮৯।


লক্ষণীয়:

ক। হাদীসের ভাষ্য হতে বুঝা যায় যে, আযান শ্রবণকারীকে মুয়াজ্জিনের প্রতিটি শব্দ শেষ হবার সাথে সাথেই জবাব দিতে হবে। সম্পূর্ণ আযান শেষ হওয়ার পর এক সাথে বলতে হবে এমনটি নয়। দেখুন: আউনুল মাবুদ ২/১৬১।


খ। মুয়াজ্জিন যখন “হায়্যা আলাস সালাহ ও হায়্যা আলাল ফালাহ” বলবে: তখন শ্রবণকারীকে বলতে হবে: “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)। দেখুন: আউনুল মাবুদ ২/১৬১।


গ) হাদীসটিতে আযানের জোড়া বাক্যগুলিকে নবী এ সংক্ষিপ্ত করার জন্য একবার উল্লেখ করেছেন, কেননা তা সবার জানা দেখুন: শরহে নববী ৪/৮৭।


ঘ) নবী ভবিষ্যতের শব্দ ব্যবহার না করে অতীত কালের শব্দ ব্যবহার করেছেন: 

এর অর্থ হলো: প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত বুঝানোর জন্য অর্থাৎ অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

দেখুন: মেরকাতুল মাফাতীহ ২/৩৫১-৩৫২।


২। আযান শুনে যে দোয়াটি পাঠ করলে, পাঠকারীর জন্য সুপারিশ অবধারিত:

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে বলবে: ।

اَللّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائمة آت مُحَمَّداً الوَسيلَةَ وَالْفَضيلَةَ وَابْعَتْهُ مَقَاماً مَحْمُوْداً الَّذي وَعَدتَهُ


অর্থ: হে আল্লাহ! এ এই পূর্ণাঙ্গ আহবান ও প্রতিষ্ঠা-লাভকারী নামাযের প্রভূ! মুহাম্মাদ (সাঃ) কে তুমি অসীলা অসীলা অর্থাৎ যার মাধ্যমে বড়র নৈকট্য অর্জন করা যায় এবং উচ্চ সম্মান বা স্থানের অর্থেও ব্যবহার হয়। আল ফাজীলাহ অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা। (ফাতহুল বারী ২/৯৫ ।

(জান্নাতের উচ্চ স্থান) ও মর্যাদা দান কর এবং তাকে সেই প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে দিয়েছ।”


কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফায়াত জরুরী হয়ে যাবে। সহীহ বুখারী, আযান অধ্যায়, আযানের সময় দোয়া করা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৬১৪, ২/৯৪ ।


অন্য বর্ণনায় এসেছে: তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন মুজয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বল, তার পর আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। তারপর আমার জন্য আল্লাহর সমীপে “অসীলা” চাও আর তা হলো জান্নাতের একটি মর্যাদাপূর্ন স্থান, তা আল্লাহর এক বান্দার জন্যই উপযোগী, আশা করি সে বান্দা আমিই। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য “অসীলা” প্রার্থনা করবে তার জন্য সুপারিশ অবধারিত।


ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে ইবনে আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণনা করেছেন। 

(দেখুন: সহীহ মুসলিম, নামায অধ্যায়, আযান শ্রবণ করে মুয়াজ্জিনের ন্যায় বলে নবী (সাঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালার নিকট তার জন্য ওয়াসীলা তথা জান্নাতের উচ্চ স্থান প্রার্থনা করা মুস্ত হাব পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১১-(৩৮৪), ১/২৮৮-২৮৯।


৩। কতিপয় এমন কালেমা যা আযানের পর বললে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে:

ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন: সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস হতে বর্ণিত, তিনি নবী হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনার পর বলবে:


أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنْ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيْتُ باللهِ رِباً وَبِمُحَمَّدٍ وَ رَسُوْلاً وَبِالإِسْلَامِ دِينًا.


অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবূদ নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তার বান্দা ও তাঁর রাসূল । আমি আল্লাহকে প্রভূ হিসেবে, এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নাবী রূপে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে লাভ করে সন্তুষ্ট। তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে । দেখুন: উল্লেখিত টীকা, হাদীস নং ১৩-(৩৮৬), ১/২৯০।


Post a Comment

0 Comments